বিছনাকান্দি, শহরের যান্ত্রিকতা থেকে একেবারেই আলাদা তার রূপ-লাবণ্য
কাজের চাপে নাকাল হয়ে অনেকেই ছুটে যেতে চান প্রকৃতির কাছে। কাটাতে চান মুক্ত হাওয়ায় কিছুটা সময়। আর এজন্য উপযুক্ত জায়গা হতে পারে বিছানাকান্দি। সিলেট শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে নীল আর সবুজের আবরণে মোড়ানো বিছানাকান্দি। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে একেবারেই আলাদা তার রূপ-লাবণ্য। বিছানাকান্দির এই রূপ-লাবণ্য বষায় বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে পাড়ি দিতে বেশ অনেকটা পথ। পথটাও কিন্তু বেশ উপভোগ্য। প্রথমে ঢাকা থেকে আপনাকে যেতে হবে গোয়াইনঘাট উপজেলার হাঁদারপাড় নামক স্থানে। গোয়াইনঘাটে রাস্তা বেশ রোমাঞ্চকর। আপনি যদি মাইক্রোতে যান তাহলে একটু ধীর গতিতে যেতে পারবেন। আর এ সময় বাইরে চোখ রাখলেই অফরুন্ত সবুজ মাঠ দেখতে পাবেন। আর একটু লক্ষ্য করলেই আপনার চোখে পড়বে মাঠগুলোর পেছনের নীল পাহাড়গুলো। নীল আকাশ আর তার চাইতেও নীল পাহাড় এবং সবুজের যে অপূর্ব সমন্বয় তা শহরের মানুষগুলোর জন্য যেন উপহারের মতো।
তবে হাঁদারপাড় থেকে বিছানাকান্দিতে যাওয়ার পথটুকু ততটা উপভোগ্য নয়। এখানে গাড়ির কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রীষ্মকালে চাইলে হেঁটেই হাঁদারপাড় থেকে বিছানাকান্দিতে চলে যেতে পারেন। সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। তবে বর্ষাকালে সেই সুযোগ নেই। বর্ষায় হাঁদারপাড় থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরবোটে করে যেতে হবে বিছানাকান্দি।
নৌকা করে বিছানাকান্দি আসার পুরো পথটা অসম্ভব রোমাঞ্চকর। স্বচ্ছ আর ঠাণ্ডা পানি ঠেলে নৌকার এঁকেবেঁকে বয়ে চলা মনে এনে দেয় অদ্ভূত এক প্রশান্তি। তার উপর বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে আশেপাশের গগনচুম্বি পাহাড় আর মাথার উপর শুভ্র শান্ত আকাশের আবরণ। পথ যত কমতে থাকে অস্পষ্ট পাহাড়গুলো স্পষ্ট নিরেট আকার নিতে থাকে। আর তখন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেন কোনো শিল্পীর আঁকা ছবির মতো এ দৃশ্য, যার প্রতিটি খাঁজে রয়েছে অপার সৌন্দর্য আর নিখুঁত কারুকার্যের নিদর্শন। পথে চলতে চলতে দুপারে দেখা মিলতে পারে কিছু আদিবাসীদের। এমনি করে চলতে চলতে কখন যে পথ শেষ হয়ে আসে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পথ শেষ হলে কি হবে, সৌন্দর্য
শেষ হওয়ার নয়। কারণ আপনি তখন চলে এসেছেন অপরূপা বিছানাকান্দিতে। এখানে পৌঁছে যখন মনে হবে সেই পাহাড় আর সেই আকাশই তো এখানে। কিন্তু পা ফেলার সাথে সাথে এই ভাবনাটুকু কখন যে তলিয়ে যাবে তা বুঝতেই পারবেন না। পা রাখতেই বুঝতে পারবেন কেন বিছানাকান্দিতে আসা। স্বচ্ছ আর হিম শীতল পানির নিচে যেন শত শত পাথরের মেলা বসেছে। নানা রঙের, নানা আকারের আর বিচিত্র সব উপাদানের পাথরে ভরপুর এই জায়গাটিকে পাথরের রাজ্য বললে ভুল হবে না।
বিছানাকান্দি ভারত আর বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১০০ গজ দূরে থাকা লাল পতাকাগুলোর সারি জানান দেয় যে ওপাশেই ভারত। এখান থেকৈ সহজেই জলপ্রপাতগুলো দেখা যায়, যা থেকে পানি বয়ে আসে বিছানাকান্দি পর্যন্ত। একটি কাঠের ব্রিজ বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে, যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিক অবস্থিত উচ্চভূমি আর সমতল ভূমির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে। এর ফলে আদিবাসীদের গবাদিপশু চারণের বিশেষ সুবিধা হয়েছে।
No comments