শেরপুর জেলা নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত

শেরপুর। বাংলাদেশের একটি জেলা ও ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৮২৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত এটি ছিলো ঢাকা বিভাগের আওতায়। শেরপুর জেলা আগে ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার একটি থানা ছিল। ১৯৮৪ সালে এটিকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে ময়মনসিংহ জেলা ও জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা, পশ্চিমে জামালপুর জেলা।



শেরপুর জেলার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীনকালে শেরপুর জেলা কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মোঘল সম্রাট আকবরের শাসন আমলে এই এলাকা দশ কাহনিয়া নামে পরিচিত ছিল। আগে শেরপুর যেতে ভয়ঙ্কর ব্রহ্মপুত্র নদী পার হওয়া লাগতো। নদী পারাপারের জন্য দশ কাহন কড়ি নির্ধারিত ছিল বলে এই এলাকায় দশ কাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।


সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভাউলিয়ার গাজীরা, ঈশা খাঁর বংশধরদের কাছ থেকে দশ কাহনিয়া এলাকা দখল করে নেয়। এই দশ কাহনিয়া পরগনাকেই পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নাম অনুসারে শেরপুর নামকরণ করা হয়। একসময় এখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং জমিদারদের বিরুদ্ধে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেসময় ফকির আন্দোলনের নেতা টিপু শাহ্‌ এই এলাকায় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেছিলো।


শেরপুর জেলা নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এ জেলা তুলসীমালা চাল, ছানার পায়েশ, ছানার চপ এর জন্য পরিচিত। তুলসীমালা চাল শেরপুরের অমূল্য রতন, যেটি এ জেলাকে বিখ্যাত করে তুলেছে বিশ্ব দরবারে। একে স্থানীয়ভাবে জামাই আদুরি চালও বলা হয়ে থাকে। শেরপুর জেলা অনুরাধার দই-এর জন্যও বিখ্যাত। অনেক উপজাতি বা নৃত্বাত্তিক জাতীর বসবাস এই শেরপুরে, বিশেষ করে গারো। বহুকাল ধরে এখন পর্যন্ত গারোদের বংশধরেরা গারো পাহাড়ের এলাকাতে বসবাস করে আসছে। 


শেরপুর জেলায় অনেক ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দেশের অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র গজনি ও গারো পাহাড় এই শেরপুরেই অবস্থিত। এছাড়া গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, কসবা মসজিদ, লোকনাথ মন্দির, মরিয়ম নগর গির্জা, নয়আনি জমিদার বাড়িসহ শেরপুর নামের প্রতিষ্ঠাতা শের আলি গাজি মাজার অন্যতম।


সময় সুযোগ করে শেরপুরে ঘুরতে গেলে জায়গাগুলো দেখে আসতে পারেন। এর বাইরে হুটকরে শেরপুর গেলে কম সময়ে চট করে এখানে কি কি দেখা নেয়া যাবে, সেরকম কয়েকটি পর্যটন স্পটের তথ্য নিয়েই এই লেখা।


১. মধুটিলা ইকোপার্ক   


বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্ক। ময়মনসিংহ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত মধুটিলা রেঞ্জের সমেশচূড়া বিটের প্রায় একশ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মধুটিলা ইকোপার্ক। পার্কের আয়তন ৩৮৩ একর এবং ১৯৯৯ সালে এই বনকে পরিবেশ-উদ্যান বা ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।


পার্কের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নজরে পড়বে উঁচু গাছের সারি। রাস্তা থেকে ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুই পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। রেস্তোরাঁ পেরোলে পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ের প্রবেশপথেই অভ্যর্থনা জানাবে ধূসর রঙের বিশাল আকৃতির শুঁড় উঁচানো পাথরের তৈরি দুটি হাতি। এরপর যত এগোনো যাবে, ততই মন ভরে যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। পথে বুনো গাছপালার ফাঁকে ফুটে আছে হরেক রকমের বুনোফুল, তাতে বাহারি প্রজাপতির ওড়াউড়ি। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার পথে ঝোপঝাড়ে দেখা মিলবে হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। হ্রদের ধারে কুমির, ব্যাঙ আর মৎস্যকন্যার অতি চমৎকার সব ভাস্কর্য। আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ঘন ঘন গাছের সারি গভীর অরণ্যের দিকে চলে গেছে। এখানে উঁচু পাহাড়ের গাছের ছায়ায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে একটি দুপুর কিংবা বিকেল।


মধুটিলা ইকোপার্কে শোভাবর্ধনকারী ও বিরল প্রজাতির বৃক্ষের বনায়নের পাশাপাশি আছে বিশ একরের ঔষধি বৃক্ষের বনায়ন। এছাড়া রয়েছে রেস্ট হাউজ, বাসগৃহ, বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, আকর্ষণীয় রাইড, স্টার ব্রিজ, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা এবং এসবের ফাকে ফাকে বসার জায়গা। মধুটিলার লেকে ঘুরে বেড়ানো জন্য আছে নৌকা ও প্যাডেল বোট। এই সবুজের সমারোহ আর পাহাড়ের হাতছানিতে প্রতি বছর সারাদেশ থেকে মধুটিলায় বেড়াতে আসে  সৌন্দর্য্য প্রিয় মানুষজন। মধুটিলা ইকোপার্কের প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ওয়াচ টাওয়ারে উঠার ফি জনপ্রতি ১০ টাকা। বিভিন্ন রাইডের টিকেট মূল্য ২০-৪০ টাকা। শেরপুর শহর থেকে স্থানীয় যেকোন যানবাহনে সহজেই যাওয়া যায় এই পার্কে। রয়েছে কার পার্কিং এর ব্যাবস্থা নিশ্চিন্তে নিজস্ব গাড়ি নিয়েও আসা যাবে। তবে এখানে খাবার দাবারের খুব ভালো ব্যাবস্থা নেই। খাবারের জন্য নিজেদের ব্যাবস্থা করে নেয়া ভালো, আর না হয় খাবারের জন্য মাথায় রাখতে হবে শেরপুর শহরের কথা। সময় পেলে আপনিও ঘুরে আসুন শেরপুর মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে।


২. গজনী অবকাশ কেন্দ্র


শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গজনী অবকাশ কেন্দ্র। এই গারো পাহাড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব এক লীলাভূমি। আর এই অঞ্চলটি সারি সারি শাল, গজারি, সেগুনগাছ; ছোট-বড় মাঝারি টিলা দিয়ে ভরা। যা প্রকৃতি ও পর্যটনপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।


শেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এর অবস্থান। গড়ে ওঠার পর থেকেই নিয়মিত পর্যটকের ভিড় থাকে এই গজনী অবকাশ কেন্দ্রে। পাহাড়, বনানী, ঝরণা, হ্রদ এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে কিছু কৃত্রিম সৌন্দর্যের সংযোজন রয়েছে এখানে। বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু স্থাপনা ও ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। গজনীর প্রবেশমুখে মৎস্যকন্যা বা জলপরী দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়। তারপর রয়েছে ডাইনোসরের বিশাল প্রতিকৃতি, ড্রাগন টানেল, জিরাফ, পদ্মসিঁড়ি, লেক ভিউ পেন্টাগন, হাতির প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ, ওয়াচ টাওয়ার, নিকুঞ্জ বন ও আলোকের ঝরণাধারা।


এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়েছে ক্যাবল কার। এছাড়াও রয়েছে ক্রিসেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রিজ, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য ড্রাগন টানেল। অবকাশকেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ সাইট ভিউ টাওয়ার। ৮০ ফুট উচু এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পুরো গজনী অবকাশের দিগন্তজোড়া সবুজ দৃশ্য। অপরূপ সৌন্দর্যময় পাহাড়ি টিলার সীমান্ত রেখা।


আগে থেকেই গজনীতে ছোট পরিসরে একটি চিড়িয়াখানা থাকলেও নতুন করে এতে সংযুক্ত করা হয়েছে মেছো বাঘ, অজগর সাপ, হরিণ, হনুমান, গন্ধগোকুল, সজারু, কচ্ছপ, বাজপাখি, খরগোশ, ভাল্লুকসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখানে। সে হিসেবেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এ অবকাশকেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ’।


সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে তিনটি নতুন রাইডার চালু করা হয়েছে। এগুলো হলো জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রিজ ও কেব্‌ল কার। পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে অবকাশকেন্দ্রের লেকে রয়েছে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ। পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াক ওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘আলোকের ঝরণাধারা’।


এ বিনোদনকেন্দ্রের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘গারো মা ভিলেজ’ও অমৃতলোক সেজেছে নতুন করে। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধানখেত এবং পাহাড়ি জনপদের জীবনধারা উপভোগ করা যায়। শিশুদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ভাস্কর্য। আছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু কর্নার। সব মিলিয়ে এসবকিছু এখানে আসা ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের জন্য যোগ করেছে আলাদা মাত্রা।


পাহাড়ি পরিবেশ গজনীতে শুধু ঘুরবেন কিছু কিনবেন না, তা কী করে হয়। অবকাশ কেন্দ্রের ভেতরে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক দোকান। গজনীতে খাবারের হোটেলগুলো বেশ উন্নত মানের ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সেখানে পাওয়া যায় সাদা ভাত ভর্তাসহ দেশী খাবার।


ভারত সীমান্তঘেঁষা উঁচু-নিচু পাহাড়বেষ্টিত এই পর্যটনকেন্দ্রের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ক্লান্ত জীবনের ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে অবসরে এমন একটি প্রকৃতিময় স্থান ভ্রমণ আনন্দ দেবে নিশ্চয়। সময় পেলে আপনিও ঘুরে আসুন শেরপুর গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকে।


৩. বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট


শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধিগাঁওয়ে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে জঙ্গল ঘেরা অপরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে আধুনিক পর্যটন স্থাপনা বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট। এটি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন পিকনিক স্পট। গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকে বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্টে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০/১২ মিনিট। পাহাড়ী ছড়া, সবুজ বন আর বন্য হাতি বিচরনের মতো রোমান্চকর দৃশ্য দেখা যাবে এই রিসোর্ট থেকে। রাত্রীযাপনকালে এই রিসোর্টটিতে ক্যাম্প ফায়ার, BBQ ডিনার আয়োজনের মতো ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রিসোর্টেই আছে ৩ বেলা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা।


বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্টে শুধুমাত্র ডে আউটিং বা ডে ট্যুর করতে চাইলে খরচ হবে ১৫০০ টাকা। একরাতের জন্য ডাবল বেডরুমের ভাড়া ২৫০০ টাকা। একসাথে ৩ রুম অর্থাৎ পুরো রিসোর্ট ভাড়া নিতে লাগবে ৭০০০ টাকা। আর পিকনিকের জন্য বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্টের আছে আলাদা প্যাকেজের ব্যাবস্থা। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ফেসবুকেই রয়েছে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। শেরপুর গজনী অবকাশ কেন্দ্র ঘুরতে গেলে এখানে কাটিয়ে আসতে পারেন একটি রাত। কিংবা শেরপুর গেলে ঘুরে আসতে পারেন বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট থেকে।


৪. বারোমারি খ্রিস্টান মিশন


শেরপুরের বারোমারীতে ১৯৪২ সালে পর্তুগালের খ্রীষ্টান মিশনের আদলে ৩৯ একর জমির উপর গড়ে উঠে বারোমারি খ্রিস্ট মিশন। নালিতাবাড়ি নাঁকুগাও স্থল বন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট থেকে ঝিনাইগাতি রাংটিয়া সীমান্ত সড়কের পাশেই বারোমারি বিজিবি ক্যাম্পের অদূরে এ খ্রিস্ট ধর্ম পল্লির অবস্থান। এই ধর্মপল্লির পাহাড় ও ছায়া ঘেরা মনোরম পরিবেশও মানুষকে বেশ আকর্ষণ করে। তাই তীর্থৎসব ছাড়াও সারা বছর জুড়েই দেশি-বিদেশী নানা পর্যটক আসে এ ধর্মপল্লি বা মিশন দেখতে। তবে ধর্মপল্লির ভেতরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য অনুমতি প্রয়োজন।


এই তীর্থ স্থান নির্মাণ করার পর ভেতরে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। বানানো হয়েছে পাহাড়ি আকাবাঁকা ও উচুনিচু ক্রুশের পথ। যেখানে যিশু খ্রিস্টের বিভিন্ন নামে ক্রুশ রয়েছে মোট ১৬টি। পহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে একসাথে তিনটি ক্রুশ ও যিশুর সমাধি। এছাড়া ধর্মপল্লির প্রবেশ পথের একটু সামনে স্থাপন করা হয়েছে শিশু খ্রিস্টের প্রতিকৃতি। এছাড়া মিশনের মাঝামাঝি স্থানে দৃষ্টি নন্দন লেকের পাশে হাত তুলে আর্শিবাদের ভঙ্গিমায় রয়েছে আরো একটি যিশুর প্রতিকৃতি। পাহাড় বেষ্টিত তীর্থের মূল আচার অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে মাদাম ম্যারির প্রায় ৪৭ ফুট সুউচ্চ প্রতিকৃতিটি ধর্মপল্লির মূল আকর্ষণ। ভারত সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ের চুড়ায় ও মনোরম পরিবেশের এই মিশনে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থৎসব অনুষ্ঠিত হয়। 


৫. অর্কিড পর্যটন প্রকল্প


শেরপুর জেলা শহরের মধ্যেই ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে অর্কিড পর্যটন প্রকল্প। এ প্রকল্পের চারদিকে রয়েছে সারি সারি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, মাঠ ভরা সবুজ ঘাস আর শান বাঁধানো পুকুর। পুকুরের চারপাশে প্রতিদিন মাছ খেতে ভিড় করে সাদা বক। এছাড়া সবুজ এই অর্কিড প্রাঙ্গনে রাখা খাঁচায় খেলা করে বানর, খোরগোশসহ নানা জীবজন্তু। প্রিয়জন অথবা বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ছাতা এবং ছাতার নিচে বসার জন্য চেয়ার। চা, কফি বা ঠাণ্ডা পানীয় পানের জন্য রয়েছে ছনের তৈরি ক্যান্টিন এবং রেস্ট হাউজ। এ যেন শহরের মধ্যে এক খণ্ড সবুজের লীলাভূমি। 


শেরপুর জেলা শহরের শেরপুর-ঝিনাইগাতী ফিডার রোড সংলগ্ন কান্দাপাড়া মহল্লায় এই প্রকল্পের অবস্থান। স্থানীয় চাতাল ব্যাবসায়ী আজাহার আলী ১৯৯০ সালে প্রথমে তার পাঁচ একর জমির উপর একটি বাগান গড়ে তোলে। সম্পূর্ণ নিজ খরচে নানা জাতের দেশি-বিদেশি বনজ ও ফলজ গাছ-গাছরা রোপণ করে গড়ে তোলে এই বাগান। শুরুতে এই বাগান অবশ্য পরিচিতি লাভ করেছিলো কলা বাগান হিসেবে। পরে ২০০৮ সাল থেকে আজাহার আলী তার মনের মাধুরি মিশিয়ে নতুন করে গড়ে তোলে এই অর্কিড পর্যটন প্রকল্প। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত অর্কিডে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পর কোনো দর্শনার্থীকে ভিতরে থাকতে দেওয়া হয় না।


প্রতিদিন এখানে বেড়াতে আসছে শহরবাসী এবং বিভিন্ন জেলার লোকজন। বিশেষ করে ছুটির দিনে বেড়াতে আসা লোকজনের ভিড় হয় বেশি। এই অর্কিড পর্যটন প্রকল্পে প্রবেশ করতে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট নিতে হয়। সবুজের সাথে মিতালি করতে চাইলে চলে যেতে পারেন শেরপুরের অর্কিড পর্যটন প্রকল্পে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানো বা শহুরে জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে চমৎকার একটি পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র এটি।

No comments

Powered by Blogger.