চারশত বছরের পুরনো বিবিচিনি শাহী মসজিদ
বাংলাদেশের অন্যতম ব্যতিক্রমি একটি মসজিদ হচ্ছে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায় অবস্থিত বিবিচিনি শাহী মসজিদ। কালের নীরব সাক্ষী এই এক গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী
মসজিদ এর বয়স প্রায় ৪’শ বছর।
বাংলাদেশের মসজিদগুলোর মধ্যে সচরাচর এতো উঁচুতে বা ঢিবির উপরে কোনো মসজিদ দেখা যায় না। তবে চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৬৬৭ সালে নির্মিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি ভূমি থেকে ৩০ ফুট একটি টিলার উপর অবস্থিত, যদিও এখন সেখানে পাকা সিঁড়ি বানানোর ফলে টিলার অস্তিত্ব বিলীন। আর হাল আমলে নির্মিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায় মহাজিরাবাদের একটি টিলার উপরে তুর্কি নকশায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) মসজিদটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদ হিসেবে ধরা যায়।
বিবিচিনি শাহী মসজিদটির বিশেষ বৈশিষ্ট হল সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪০ ফুট সুউচ্চ টিলার উপর এর অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট প্রস্থ ৪০ ফুট। চার পাশের দেয়াল প্রায় ৭ ফুট চওড়া। উত্তর, দক্ষিন ও পূর্ব পাশে তিনটি দরজা খিলানের সাহায্যে নির্মিত। মসজিদের ইটের রং ধুসর বর্নের। এর গাঁথুনিতে ব্যবহার করা ইটগুলো মোগল আমলের ইটের মাপের সমান। এই ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি সম্পূর্ন আলাদা। এটি ইট ও সুরকি দ্বারা নির্মিত। মসজিদটিতে রয়েছে ৪০ ফুট সুউচ্চ ও সুদৃশ্য একটি মিনার। যা অনেক দুর থেকেই দেখা যায়। মসজিদের চারিপাশে রয়েছে খেজুরসহ ও অন্যান্য অসংখ্য গাছপালা।
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার উওর প্রান্তে বিবিচিনি শাহী মসজিদের অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিঃমিঃ। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কি. মি. দূরে বিবিচিনি শাহী মসজিদটি বেতাগীর সীমানায় পড়লেও এর অতি নিকটতম এলাকা মূলত বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি ইউনিয়ন।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের আমলে হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) (যার নামানুসারে নেয়ামতির নামকরন হয়েছে) সুদুর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। ঐ সময় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সুজা এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। এই আধ্যাত্বিক সাধক কয়েক জন অনুসারিকে সাথে নিয়ে দক্ষিন বাংলার সাগর উপকুলবর্তী বেতাগী উপজেলার বর্তমান বিবিচিনি গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। পরবর্তীতে সাধক নেয়ামত শাহ এর আগ্রহে তার অনুসারি শাহ সুজা এই গ্রামেই এক গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন।
লোকমুখে প্রচলিত এই মসজিদটি তৈরী করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এই মসজিদকে পরীর মসজিদ বলেও জানেন। ধারনা করা হয় নেয়ামত শাহের কন্যা চিনিবিবির নামের সাথে মিল রেখে এই মসজিদের নাম করন করা হয় বিবিচিনি শাহী মসজিদ। আর সুফি সাধক নেয়ামত শাহের নাম অনুসারে এলাকার নাম করন করা হয় নেয়ামতি। পরবর্তীতে এই ইউনিয়নও বিবিচিনি নামে পরিচিতি লাভ করে।
ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে যে, শাহ নেয়ামতুল্লাহের দ্বীনি প্রচারে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন বহু হিন্দু ও বৌদ্ধ। স্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত ওই সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে মানুষের কষ্ট দেখে শাহ নেয়ামতুল্লাহ নিজের তসবিহ বিষখালী নদীতে ভিজিয়ে দেন, আর তার অলৌকিকতার গুণের কারণে পানি সুপেয় হয়। আজও পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন সংলগ্ন এই নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিকতার কারণেই বিষখালী নদীতে কুমিরও আসত না ।
মসজিদের পাশে প্রায় ১৫-১৬ হাত লম্বা তিনটি কবর রয়েছে, ধারনা করা হয় বাবা ও ২ মেয়ে এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে এই সাধক ইন্তেকাল করেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বরগুনা থেকে বাসযোগে বেতাগী যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে বিবিচিনি শাহী মসজিদে যাওয়া যায়। এমনকি বরিশাল থেকে বাস যোগে সরাসরি যাওয়া যায়। সরাসরি লঞ্চে চেপেও বরগুনা অথবা বেতাগী যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি বরগুনা বেতাগীর লঞ্চ ছেড়ে যায় বিকাল ৫/৬টার মধ্যেই।
বাংলাদেশের মসজিদগুলোর মধ্যে সচরাচর এতো উঁচুতে বা ঢিবির উপরে কোনো মসজিদ দেখা যায় না। তবে চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৬৬৭ সালে নির্মিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি ভূমি থেকে ৩০ ফুট একটি টিলার উপর অবস্থিত, যদিও এখন সেখানে পাকা সিঁড়ি বানানোর ফলে টিলার অস্তিত্ব বিলীন। আর হাল আমলে নির্মিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায় মহাজিরাবাদের একটি টিলার উপরে তুর্কি নকশায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) মসজিদটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদ হিসেবে ধরা যায়।
![]() |
ঐতিহাসিক “বিবিচিনি শাহী মসজিদ”এর বয়স প্রায় ৪’শ বছর |
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার উওর প্রান্তে বিবিচিনি শাহী মসজিদের অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিঃমিঃ। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কি. মি. দূরে বিবিচিনি শাহী মসজিদটি বেতাগীর সীমানায় পড়লেও এর অতি নিকটতম এলাকা মূলত বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি ইউনিয়ন।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের আমলে হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) (যার নামানুসারে নেয়ামতির নামকরন হয়েছে) সুদুর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। ঐ সময় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সুজা এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। এই আধ্যাত্বিক সাধক কয়েক জন অনুসারিকে সাথে নিয়ে দক্ষিন বাংলার সাগর উপকুলবর্তী বেতাগী উপজেলার বর্তমান বিবিচিনি গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। পরবর্তীতে সাধক নেয়ামত শাহ এর আগ্রহে তার অনুসারি শাহ সুজা এই গ্রামেই এক গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন।
লোকমুখে প্রচলিত এই মসজিদটি তৈরী করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এই মসজিদকে পরীর মসজিদ বলেও জানেন। ধারনা করা হয় নেয়ামত শাহের কন্যা চিনিবিবির নামের সাথে মিল রেখে এই মসজিদের নাম করন করা হয় বিবিচিনি শাহী মসজিদ। আর সুফি সাধক নেয়ামত শাহের নাম অনুসারে এলাকার নাম করন করা হয় নেয়ামতি। পরবর্তীতে এই ইউনিয়নও বিবিচিনি নামে পরিচিতি লাভ করে।
ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে যে, শাহ নেয়ামতুল্লাহের দ্বীনি প্রচারে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন বহু হিন্দু ও বৌদ্ধ। স্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত ওই সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে মানুষের কষ্ট দেখে শাহ নেয়ামতুল্লাহ নিজের তসবিহ বিষখালী নদীতে ভিজিয়ে দেন, আর তার অলৌকিকতার গুণের কারণে পানি সুপেয় হয়। আজও পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন সংলগ্ন এই নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিকতার কারণেই বিষখালী নদীতে কুমিরও আসত না ।
মসজিদের পাশে প্রায় ১৫-১৬ হাত লম্বা তিনটি কবর রয়েছে, ধারনা করা হয় বাবা ও ২ মেয়ে এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে এই সাধক ইন্তেকাল করেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বরগুনা থেকে বাসযোগে বেতাগী যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে বিবিচিনি শাহী মসজিদে যাওয়া যায়। এমনকি বরিশাল থেকে বাস যোগে সরাসরি যাওয়া যায়। সরাসরি লঞ্চে চেপেও বরগুনা অথবা বেতাগী যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি বরগুনা বেতাগীর লঞ্চ ছেড়ে যায় বিকাল ৫/৬টার মধ্যেই।
No comments