রায়বাহাদুর গেট বা তাড়াশ ভবন, পাবনা
তাড়াশ ভবন পাবনা
জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থীত। শহরের এ হামিদ রেডের পাশে মাথা তুলে দারিয়ে আছে তারাশ ভবন। ক্ল্যাসিকাল গ্রিক স্টাইলে নির্মিত তাড়াশ ভবন অন্যান্য ভবনের মতোই সুন্দর। তবে এর বিশেষত্ব প্রবেশ তোরণে। তোরণটি প্রাচীন গ্রিকের ৩টি ক্লাসিক্যাল স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম ডোরিক অর্ডারে নির্মিত। দেশে এ ধরণের প্রবেশ তোরণ দুর্লভ। তোরণটি মোট ৮টি থাম এর উপর দাঁড়িয়ে। আর মাঝে অর্ধ বৃত্তাকার খিলান পথ। এ
তোরণ সে সময়ে অর্থ ও প্রতিপত্তির তীব্র বহিঃপ্রকাশ ছিল। এই তোরনের কারনেই এ জায়গাটি স্থানিয়ভাবে রায়বাহাদুর গেট নামে বেশি পরিচিত।
জমিদার বনওয়ারী লাল রায় তাড়াশ ভবনের নির্মাতা।
তাড়াশ ভবনের দরজা, জানালাগুলো দামি আর মজবুত কাঠের তৈরি এবং দরজা ও জানালার উপরে অর্ধ বৃত্তাকার অংশে রঙিন কাঁচের খোপ পার্টিশন দেয়া। প্রধান ৩টি ঘরের দেয়ালে, মেঝে থেকে প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা পর্যন্ত হালকা নকশার কাঠের প্যানেল লাগান। ১৯৯৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এ ভবনকে সংরক্ষিত ইমারতের আওতাভুক্ত করেছে। এ ভবনটিতে জমিদাররা স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন না। তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালে পুরো জমিদার পরিবার এ ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন
বলে জানা যায়।
তাড়াশ জমিদারি :
১৭ শতকের প্রথমে মতান্তরে ১৬ শতকের শেষের দিকে বাসুদেব তালুকদার
(তার অপর নাম নারায়ণদেব চৌধুরী) সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায়-এ জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। বাসুদেব ঢাকার নবাব ইসলাম খাঁর অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। সততা ও আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নবাব তাকে তাড়াশ মহাল "চৌধুরীরাই তাড়াশ"
বরাদ্দ দেন এবং তাকে ‘রায় চৌধুরী’
উপাধিতে ভূষিত করেন।
এটি মুলত: রাজশাহীর সাঁওতাল রাজার জমিদারী ছিল এবং ২০০টি মৌজা ছিল। বাসুদেব রায়ের দুই ছেলে, বড় জয়কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ও ছোট রামনাথ রায় চৌধুরী। পরবর্তীতে বড় ছেলের পঞ্চম পুত্র বলরাম দাস জমিদারীর দায়িত্ব নেন। এরপর বংশ পরম্পরায় রঘুরাম, রামচন্দ,
রামসুন্দর,
কৃষ্ণ সুন্দর, গৌরসুন্দর জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। গৌরসুন্দর রায় নিঃসন্তান হওয়ায় মূল বংশের বিলুপ্তি ঘটে এবং তার পরবর্তী চারজন উত্তরাধিকারী ছিলেন দত্তক পুত্র। মজার বিষয় হচ্ছে, তাড়াশের জমিদাররা দত্তক পুত্রদের কর্মের জন্যই আজও স্মরণীয়। গৌরসুন্দর রায়ের দত্তক পুত্র বনওয়ারী লাল রায় অতি খ্যাতিমান ছিলেন। বনওয়ারীলাল পাবনা
জেলার ফরিদপুর থানার ডেমরাতে বসতি স্থাপন করেন এবং কালক্রমে এই স্থানের নাম হয় বনওয়ারীনগর। তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ প্রতিষ্ঠায় অর্থ সহায়তা প্রদান করেছিলেন।
বনওয়ারী লাল রায়কে ব্রিটিশ সরকার ‘রায় বাহাদুর’
উপাধি দেয়। ১৮৮২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর দত্তকপুত্র বনমালী রায় (জন্ম ১৮৬২) তাড়াশের পরবর্তী জমিদার হন। বনমালী রায় পাবনা শহরে ‘ইলিয়ট বনমালী টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’,
সিরাজগঞ্জে
‘বনওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়,
বনওয়ারী নগরে করনেশন বনমালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বা সিবিপি উচ্চ বিদ্যালয়
(১৯১২ সালে) প্রতিষ্ঠা করেন।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের নতুন বিজ্ঞান ভবন নির্মাণেও তিনি অর্থ প্রদান করেন (এক সাথে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন)। এছাড়া পাবনা বনমালী ইনস্টিটিউট তারই নির্মিত। তিনিও ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। বনমালী রায়কে বৃহত্তর পাবনা জেলার শ্রেষ্ঠ জমিদার বলা হয়। তাঁর দুই পুত্র (দত্তক) ক্ষিতিশভূষণ ও রাধিকাভূষণ ১৯৫০ সালের জমিদারি প্রথা বিলোপ পর্যন্ত তাড়াশের জমিদারি পরিচালনা করেছেন। বনওয়ারী লাল ও তার পরবর্তী ৪ পুরুষের মূল বসবাস ছিল ফরিদপুরে বনওয়ারী রাজবাড়ীতে।
যেভাবে যাবেন -
রায়বাহাদুর
গেট বা তাড়াশ ভবন পাবনা মূল শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থীত। ঢাকা থেকে বা দেশের যেকোন স্থান থেকে পাবনা পৌছে যেকোন বাহনে চড়ে যাওয়া যাবে। এমনকি পাবনাগামি যেসব বাস শহরে প্রবেশ করে সেগুলোকে বললে সরাসরি রায়বাহাদুর গেট বা তারাশ ভবনের সামনেই নামিয়ে দেবে। ঢাকা থেকে পাবনাগামি বাস ভাড়া ননএসি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এসি ৫০০ থেকে ১০০০টাকা।
No comments