সাতলার শাপলা গ্রাম
শাপলার রাজ্য, শুনে একটু অবাক লাগছে তাই না! তবে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এক বিলে সত্যিই দেখা মিলবে এমন রাজ্যের। যতই বিলের ভেতরে যাবেন, ততই বাড়তে থাকে লালের আধিক্য। এ যেন এক শাপলার রাজ্য। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশি কাঁথা। ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে সাতলা।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের এক বিলের আগাছা আর লতা-পাতায় ঘেরা হাজারো শাপলা চোখ জুড়ায় পথচারিদের। এ বিলে কবে থেকে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে স্থানীয় কিছু বয়স্কদের থেকে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই তারা এ বিলে শাপলা ফুটতে দেখেছেন। এ বিলে তিন ধরণের শাপলা জন্মে। লাল, সাদা আর বেগুনি। তবে লাল শাপলাই বেশি। উত্তর সাতলা নামে এ গ্রামটির প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার চাষ হয়। গ্রামের অধিবাসীদের ৭০% ই শাপলা চাষ এবং বিপণনের সাথে জড়িত। এ গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাপলা সরবরাহ করা হয়।
এখানে প্রায় ৯ মাস শাপলা হয়। মার্চ থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত শাপলার পুরো সিজন এখানে। তাই এ সময়ের মধ্যে গেলে শাপলা দেখতে পাবেন। শাপলা দেখতে হলে আপনাকে সকাল ৮টার আগে বিলে যেতে হবে। কেননা এই সময়ের পরে ফুল বুজে ছোট হয়ে যায় অথবা শাপলা শিকারিরা শাপলা তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যায়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় রাতে গ্রামে থাকতে পারলে। সাতলা ঘুরে বরিশালে ফিরে দুপুরে খেয়েদেয়ে বরিশাল শহর ঘুরে দেখতে পারেন। বরিশালের ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে গুটিয়া মসজিদ, বিবির পুকুর বেশ নামকরা।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে লঞ্চ অথবা বাসে যেতে পারেন। লঞ্চে গেলে ভাড়া পড়বে ২০০টাকা (ডেক) থেকে শুরু করে ৫০০০টাকা (বিভিন্ন ধরনের কেবিন)। সকাল ৫.৩০ টার দিকে বরিশাল চলে আসবেন। এরপরে অটোতে নথুল্লাবাদ আসবেন। এখান থেকে বাসে সাতলা যেতে পারেন কিন্তু অনেক সময় লাগে (প্রায় আড়াই ঘণ্টা)। সবচেয়ে ভালো হয় যদি একটা মাহেন্দ্র রিজার্ভ নেন। তাহলে খুব আরামে ৮ জন বসতে পারবেন আর সোয়া ১ ঘণ্টার মধ্যে সাতলা চলে যাবেন। মাহেন্দ্র ভাড়া করার সময় অবশ্যই বলে নিবেন বিলে ২ ঘণ্টার মত ঘুরবেন আর আপ ডাউনে যে সময় লাগে। ভাড়া নিবে ১৫০০ টাকা।
আর বাসে আসতে চাইলে ঢাকার গাবতলী/সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন সময়ে বরিশালে অনেক বাস আসে। ভাড়া পড়বে ৪৫০ টাকা। এরপরে সকালে নথুল্লাবাদ নামবেন। সাতলা পৌছে নৌকা নিবেন। এখানে স্থানীয়রাই নৌকা চালায়, ভাড়া ফিক্সড না।
কোথায় থাকবেন: সাতলাতে থাকার জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই, থাকতে হলে থাকতে হবে স্থানীয় কোনো মানুষের বাড়িতে। এছাড়া আপনি চাইলে বরিশাল ফিরে আসতে পারেন। বরিশালে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
No comments