বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন পাবনার জোড় বাংলা মন্দির। মন্দিরটির জ্যামিতিক কারুকাজ ও টেরাকোটার কাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে। যদিও টেরাকোটার কাজ খুবই সামান্য। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী জোড় বাংলা মন্দিরটি ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করা হয়। ব্রজমোহন ক্রোড়ী নামক একজন মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। তিনি মুর্শিদাবাদ নবাবের তহশীলদার ছিলেন। তবে মন্দিরটি আবিষ্কারের সময় কোনো শিলালিপি পাওয়া না যাওয়ায় এর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়নি।
 |
পাবনার জোড় বাংলা মন্দির |
মন্দিরটি দোচালা স্থাপত্য রীতিতে পাশাপাশি ২টি চালা নিয়ে নির্মিত। মন্দিরের সদর পশ্চিম দিকে। উত্তর ও পশ্চিম দিকে রয়েছে টানা বারান্দা। ২টি প্রবেশ পথও এই দুই বারান্দা দিয়ে। সামনের ঘরটি মণ্ডপ ও পেছনেরটি গর্ভগৃহ। মণ্ডপের সামনের বারান্দায় ৩টি খিলান আছে। উত্তর ও দক্ষিণদিকে ৪টি করে মোট ৮টি স্তম্ভের উপর মন্দিরটি দাঁড়িয়ে।
 |
সংস্কারের আগের ছবি |
মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১৬ হাত, প্রস্থ ১৪ হাত, উচ্চতা ২২ হাত এবং প্রাচীরের বেড় তিন হাত। দোচালা মন্দিরের শেষ দুই প্রান্ত উচু হয়ে একসাথে মিশেছে। দেয়ালগুলো অত্যন্ত প্রশস্ত হলেও কামরাগুলো খুব ছোট ছোট। সামনের দিকে ছাড়া অন্য দিকগুলোতে টেরাকোটার তেমন কোনো কাজ নেই।
 |
সংস্কারের আগের ছবি |
সাধারণ প্লাস্টার ও মাঝে মাঝে ২/১টা নকশা টেরাকোটা। তবে ছাদের ঠিক নিচদিয়ে তিন দিকের ওয়ালে টানা জ্যামিতিক কারুকাজ আছে। সামনের দিকের টেরাকোটাগুলোর একটি বড় অংশ ছাঁচ টেরাকোটা। টেরাকোটায় রাম-রাবনের যুদ্ধ, পৌরনিক কাহিনী ও জ্যামিতিক নকশা স্থান পেয়েছে।
মন্দিরটি কি মন্দির অথবা কিসের পূজা হত; তা জানাযায়নি। এতে কোনো শিলালিপি নেই। বৃটিশ শাসনামলে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদফতর কর্তৃক সংরক্ষণের জন্য গৃহীত হয়।
 |
সামনের দিকের টেরাকোটাগুলোর একটি বড় অংশ ছাঁচ টেরাকোটা |
মন্দিরটি নিয়ে নানা উপকথা ও গল্প চালু আছে। অনেকে বলেন, ব্রজবল্লভ অথবা মতান্তরে ব্রজমোহন রায় চৌধুরী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মুঘল সেনাপতি মানসিংয়ের পাবনা শহরের নিকটবর্তী ছাতিয়ানী গ্রামে সেনানিবাসের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহকারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ কাজে তিনি প্রচুর অর্থ ও ভূসম্পদের মালিক হন। তিনি সেনানিবাসের সরবরাহে কারচুপি করতে গিয়ে ধরা পড়েন ও বিতাড়িত হন। সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ততা কাটাতে তিনি এ মন্দির নির্মাণ করেন। অধিকাংশের মতে সম্ভবত ব্রজবল্লভ ও ব্রজমোহন রায় চৌধুরী একই ব্যক্তি ছিলেন।
 |
সামনের দিকের টেরাকোটাগুলোর একটি বড় অংশ ছাঁচ টেরাকোটা |
কিভাবে যাবেন: ঢাকা অথবা দেশের যেকোনো স্থান থেকে পাবনা শহরে যাওয়া যায়। শহরে নেমে যেকোনো বাহনে চড়ে দক্ষিণ রাঘবপুর চলে যেতে হবে। পাবনা শহরের তালতলা পুকুরের কাছেই জায়গাটি। বসতিপূর্ণ এলাকাটির চারদিকে অনেক বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় বাইরে থেকে মন্দিরটি দেখা যায় না। তাই কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে জোড় বাংলা মন্দির।
No comments