ইতিহাসের সাক্ষি - ঐতিহাসিক জেলা যশোর

যশোর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন অঞ্চল। এর অন্য একটি প্রচলিত বানান যশোহর। ব্রিটিশ আমলে খুলনা ছিল যশোর জেলার অধিভুক্ত একটি মহুকুমা।  খুলনা বিভাগের অধীন ৮টি উপজেলা নিয়ে এ জেলা গঠিত।

বিখ্যাত যশোর রোডের কথা শুনলে মনে পড়ে যায় এ্যালেন গিনজ বার্গের কবিতা। মনে পড়ে ১৯৭১ সালে এই পথ ধরেই শত শত শরনার্থী কত কষ্ট করে ভারতের দিকে গিয়েছে। আরো মনে পড়ে মৌসুমী ভৌমিকের সেই বিখ্যাত গানটি- ‘শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল; যশোর রোডের দু’ধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদা মাটি জল, কাদা মাটি মাখা মানুষের ঢল।’ 
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিয়েছে বিখ্যাত যশোর রোড
যশোরের জামতলার মিষ্টি বেশ বিখ্যাত। যশোরের গন্ডি পেরিয়ে দেশ বিদেশের ভোজন রসিকের রসনাতৃপ্ত করতে এই মিষ্টির জুরি নেই। আর আপনার রসনা যদি হয় মিষ্টান্ন লোভী তাহলে তো কথাই নেই। যশোর রোড ধরে সোজা চলে যাবেন জামতলা বাজারে। এখানে মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। জামতলার রসগোল্লা মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- খাটি ছানায় বানানো বাদামী রঙের পঞ্জ মিষ্টিটি মোটেও কড়া মিষ্টি নয়।  প্লেটে সাজিয়ে আপনার সামনে যখন পরিবেশন করবে বিভিন্ন সাইজের রসগোল্লা, তখন আপনার চোখও ছানাবড়া হতে বাধ্য। 

যশোরে যাবেন আর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি সাগরদাড়ী যাবেন না তা কি করে হয়?  কপোতাক্ষ নদ আর বাংলা সাহিত্য মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে এই সাগড়দাড়ীর বাতাসে। এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন মহা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কপোতাক্ষ তীরেই কেটেছে তার শৈশব ও বাল্যকাল। এটিই তার পিতৃভিটা। তাই আজও ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য আকর্ষণীয়  সাগরদাড়ী। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ী গ্রামে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি প্রত্নতত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি প্রত্নতত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে
জানুয়ারির শেষের দিকে সাগরদাড়ী যেতে পারলে ভালো। মহাকবির জন্মদিন উপলক্ষে ২৫ জানুয়ারি প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা বসে এখানে। তাই এই সময় যেতে পারলে রথ দেখা আর কলা বেচা দুইই হবে। 
ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে মনিহার সিনেমা হল
আর হ্যাঁ, হাতে সময় থাকলে বিখ্যাত মনিহার সিনেমা হলে ছবিও দেখে আসতে পারেন। দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হলে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা জীবনে কম কিছু নয়। ৪বিঘা জমির উপর তৈরি করা হয়েছে ১৪০০ আসন বিশিষ্ট এই বিশাল সিনেমা হল। ১৯৮৩ সালে চারতলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনিহার হল তৎকালীন সময়ে ব্যপক আলোচনার জন্ম দেয়, জনপ্রিয়তাও লাভ করে ব্যপক। সেসময় দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো একবার মনিহার হলে সিনেমা দেখবে বলে। মনিহার হলে প্রথম সিনেমা প্রদর্শিত হয় পরিচালক দেওয়ান নজরুলের, সোহেল রানা ও ববিতা অভিনীত জনি সিনেমাটি। এখন মনিহার সিনেমা হলের অতীত জৌলুস না থাকলেও ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে যশোর শহরের প্রানকেন্দ্রে। 
ছবি - সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.