রামসাগর - বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দিঘি
বাংলাদেশের দক্ষিণে যেমন বঙ্গপসাগর, তেমনি উত্তরের
জেলা দিনাজপুরের দক্ষিণেও আরেকটি সাগর রয়েছে। সেটির নাম রামসাগর। রামসাগর আসলে কোনো সাগর নয়, দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট একটি দিঘি। এটি আকার ও সৌন্দর্য্যের দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দিঘি।
![]() |
রামসাগর এখন একটি মনোরম পার্ক যা বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অধিকারি |
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দিঘিটি শুধু জলাধার বা ঐতিহাসিক কীর্তি নয়। এটি একটি মনোরম পার্ক যা বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অধিকারি। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য দিঘিটি খনন করা হয়।
বলা হয়, সে সময় অর্থাৎ ১৭৫০-১৭৫৫ সালের দিকে এই অঞ্চলে প্রচণ্ড খড়া ও দুর্ভিক্ষ চলছিল। তখন রাজা রামনাথ ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষদের সাহায্য করেন এবং দিঘিটি খনন করেন। এতে প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক অংশ নেয় এবং সে সময়ের মুদ্রায় মোট ব্যয় দাড়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
এই দিঘি নিয়ে চালু আছে অনেক উপকথা ও গল্প। অনেকে বলে রাজা প্রাণনাথের সময় দেখা দেয় ভিষণ পানির অভাব। মারা পড়ে বহু মানুষ। রাজা তাই প্রকাণ্ড দিঘি খনন করেন। কিন্তু দিঘি খনন করলেও তাতে পানির দেখা মেলে না। একদিন রাজা স্বপ্নে দেখেন যে, এই দিঘিতে তার একমাত্র পুত্র রামনাথের প্রাণ বিসর্জন দিলেই দেখা মিলবে জলের। প্রজাদের কথা চিন্তা করে রামনাথ খুড়ে রাখা দিঘির মাঝে তৈরি করা একটি মন্দিরে গিয়ে পূজা দেয়ার সাথে সাথেই মাটি ফেটে চারদিক থেকে পানি এসে তাকে গ্রাস করে নেয়। গুণমুগ্ধ প্রজারা সেই মহান যুবরাজের পূণ্যস্মৃতিকে অমর করে রাখতে দিঘির নাম করেন রামসাগর।
![]() |
এটি আকার ও সৌন্দর্য্যের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দিঘি |
রামসাগর নামের দিঘিটির চারপাশ সবুজ গাছপালায় ঘেরা। পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রামসাগর একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দীঘি এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কর্পোরেশন বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দীঘিটির পশ্চিম পার্শ্বে একটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিশাল জলাশয়ের চারিপাশে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
No comments