উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ মহাস্থানগড়
যারা ইতিহাসের সানিধ্যে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তারা ঘুরে আসতে পারেন উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ, বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী জেলা বগুড়া থেকে। বগুড়াকে বলা হয় প্রাচীন বাংলার রাজধানী। এই পূর্ণবর্ধনে অর্থাৎ বর্তমানের মহস্থানগরে ছিল মোর্য, গুপ্ত, পাল, সেন যুগের শাসকবর্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর ধারে এই দূর্গনগরী। শত হাজার বছরের ইতিহাস যেন ঘুমিয়ে আছে এখানে। সমগ্র বাংলা সর্ব প্রধান এবং সর্ব প্রাচীর এই দূর্গনগরী মাটি ও ইটের বেষ্টরী প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষীত। বেষ্টনী প্রাচীর ছাড়াও পূর্বদিকে নদী ও পশ্চিমদিকে গভীর পরিখা নগরীর অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই জায়গাটি পরাক্রমশালী মোর্য, গুপ্ত ও পাল শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী এবং পরবর্তীতে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রত্নতত্তবিদ স্যার আলেকজেন্ডার ফ্লেমিং হ্যাম ১৮৭৯ সালে মহস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষকে ইউ-এন-সাং বর্ণিত পূর্ণ নগরী হিসেবে সঠিকভাবে সনাক্ত করেন। এসব ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখলে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যেমন জানা যাবে, তেমনি মনও ভালো হবে। পূর্ণ নগরীরর দূর্গের ঠিক বাইরে করতোয়া নদীর পাড়ের জায়গাটির নাম গোবিন্দ ভিটা। গোবিন্দ ভিটাকে সেসময়ের একটি মন্দির হিসেবে ধরা হয়। এখন এটার ঠিক পাশেই রাস্তার অপর পাশে মহস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। জাদুঘরে রয়েছে মহস্থানগড়ে প্রত্নসামগ্রী।
মহাস্থানগড়ে পূর্ণবর্ধনের ধ্বংসাবশেষ দেখে সেই সময়টা খুব একটা উপলব্ধি করা যায় না। এর ইতিহাস ভালোভাবে জানতে হলে এই জাদুঘরে যাওয়া উচিত। জাদুঘরে শুধুমাত্র মহস্থানগড় এলাকার নয়, পুরো বরেন্দ্রভূমিরও বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া প্রত্ন নিদর্শন ঠায় পেয়েছে। মহস্থানগড় জায়গাটি বিশাল এবং বিস্তৃত। মহস্থানগড়ের গোবিন্দভিটা, প্রাচীন নগরীর দেয়াল, একটু দূরে মাহী সাওয়ারের মাজার কিংবা গোকুল মেধে গেলে বেহুলার বাসর ঘর সবকিছু ধীরে ধীরে দেখলে উপলব্ধি করা যাবে সেই হাজার বছর আগে বাংলার রাজধানী কেমন ছিল। বর্তমান রাজধানী ঢাকাবাসীসহ দেশের যে যেখানে থাকুন না কেন একবার গিয়ে দেখে আসুন প্রাচীন নগরীটি। এখানে গেলে জানতে সেই সময়কার সমৃদ্ধ জনপদ কেমন ছিল।
No comments