দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি উপজেলা শ্রীমঙ্গল। এটি মূলত হাওর, চা-বাগান আর উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত। নানা জংলী জীব-জন্তুর বিচরণ, পাহাড়ি ছড়ায় অবিরাম পানি প্রবাহ, পাখির অভয়ারণ্য এ উপজেলাকে করেছে আরো বৈচিত্র্যময়। দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ছড়া, চা বাগান, বনাঞ্চল, নীল জলরাশির হাওর সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গল অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিচিত্র এ শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বেশ কিছু পর্যটন স্পট রয়েছে।
লাউয়াছড়া উদ্যান, চা-রাবার-লেবু-আনারস বাগান, বাইক্কা বিল, টি-রিসোর্ট, চা জাদুঘর, ডিনস্টন সিমেট্রি, নির্মাই শিববাড়ি, গলফ ফিল্ড, লালমাটি পাহাড়, বার্ণিশ টিলা, বন্যপ্রাণী সেবাশ্রম, চা বাগানের লেক (মাধবপুর হ্রদ), চা-কন্যা ভাস্কর্য, হাইল হাওর, বধ্যভূমি ৭১, বিটিআরআই, খাসিয়া পানপুঞ্জি, গারোপল্লী, মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১ প্রর্ভতি এ জনপদকে করেছে নজরকাড়া।
শ্রীমঙ্গলের বৈচিত্র্যময় এসব স্থান দেখতে বর্তমানে দেশী পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকরাও ছুটে আসছেন। শীতের শুরুতে এখানে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। চা বাগানই সাধারণ ভ্রমণার্থীদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ছোট-বড় মিলিয়ে এ উপজেলায় চা-বাগান রয়েছে ৩৮টি। এর মাঝে অনেকগুলোই শতবর্ষী। শ্রীমঙ্গল শহরে ঢোকার মুখেই বড় করে লেখা “চায়ের দেশে আপনাকে স্বাগতম”। আসলে শ্রীমঙ্গলকে বলাই হয় চায়ের দেশ।
নয়নাভিরাম এ শহর দেখতে আসা মানুষ মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। শ্রীমঙ্গল শুধু পর্যটন শহরই না, এখানকার চা শিল্প, রাবার, বাঁশ-বেত, লেবু, আনারস, কাঁঠাল, মূল্যবান কাঠ, তাঁতশিল্প ও খনিজ সম্পদের জন্যও বিখ্যাত। শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস। রয়েছে ত্রিপুরা, খাসিয়া, মণিপুরী, সাঁওতাল, গারো, মুরা, খাসিয়া, উড়াং সহ বেশ কয়েকটি নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এছাড়া উপজেলার চা বাগানগুলোতে বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই বাঙালি জনগোষ্ঠির সাথে দৃঢ় সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাস করে আসছে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরা। এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, জীবনাচার, পোষাকের ভিন্নতাসহ আদিবাসী গ্রাম ও পাড়ার বিচিত্র দৃশ্যও উপভোগ করেন পর্যটকরা।
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের অন্যতম আকর্ষণ ‘সাত রঙা চা’। এখানে বেড়াতে যাবেন অথচ এই সাত রং চায়ের স্বাদ নেবেন না, তা কী করে হয়! একই গ্লাসের মধ্যে স্তরে স্তরে সাজানো সাত রং চা। এই চা বানানোর প্রক্রিয়া কিছুটা গোপনেই করে থাকেন দোকানীরা। অর্ডার করলে গোপন ঘর থেকে প্রস্তুত করার পর সেই চা আপনাকে পরিবেশন করা হবে।
শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে হলে অনন্ত ৩-৪ দিন সময় নিয়ে যাবেন। শ্রীমঙ্গল শহরে থাকার জন্য হোটেলের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রীমঙ্গলে টি বোর্ড রিসোর্টসহ বেশ কিছু ভালো, উন্নত, আর দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টও আছে। রুচি আর বাজেট মিলিয়ে পছন্দমতো যে কোনো একটিতে উঠতে পারেন।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.