দেশের ঐতিহাসিক এক নিদর্শন ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদ’। এটি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ৬ মাইল উত্তরে সাতৈর গ্রামে অবস্থিত। জানা যায়, প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ (১৪৯৪-১৫১৯) ছিলেন একজন স্বাধীন বাংলার সুলতান। তখন এই সাতৈর গ্রামে বহু আওলিয়ার বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে হযরত শাহ সুফী শায়েখ শাহ ছতুরী (রাঃ) এর মুরিদ ছিলেন আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি সেই সময়ে নির্মিত হয়। সাতৈর মাহী মসজিদের পাশ ঘেঁষেই গেছে ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাংক রোড বা শের শাহ সড়ক। কেউ কেউ মনে করেন সাতৈর শাহ মসজিদ শের শাহের (১৪৮৬ – ২২শে মে, ১৫৪৫) আমলের কীর্তি।
ধারণা করা হয়, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ তার জনৈক পীরের সম্মানে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হওয়ার পর মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে তুঘলকাকৃতিতে তৈরি বর্গাকার এই মসজিদটি বাইরের দিক থেকে প্রতিপাশে ১৭.৮ মিটার এবং ভেতরের দিক থেকে ১৩.৮ মিটার বিস্তৃত। আগে মসজিদটির মেঝে ভূমি থেকে প্রায় ০.৭৬ মিটার উঁচু থাকলেও এখন এটি ভূমি থেকে ০.৬ মিটার উঁচু।
সাতৈর শাহী জামে মসজিদটিতে মোট ৯টি কন্দ আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতি। ভেতরে পাথরের তৈরি ৪টি স্তম্ভ এবং দেয়াল সংলগ্ন মোট ১২টি পিলার রয়েছে। পশ্চিমে তিনটি মেহরাব আছে, যার কেন্দ্রটি তুলনামুলকভাবে বড়।
এছাড়াও মসজিদের চত্বর ঘেঁষা প্রাচীর বেষ্টিত একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ধারণা করা হয়, জায়গাটি সুলতানের মুরশিদ হযরত শাহ সুফী শায়েখ শাহ ছতুরী (রহ.) এবং তার ভক্তকুল ও একান্ত কয়েকজন সহচরের মাকবারা। আর মসজিদের অদূরেই রয়েছে বড় একটি পুকুর। সম্ভবত মসজিদ নির্মানের সময় সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ পুকুরটি খনন করেছিলেন।
মসজিদটি সম্পর্কে এলাকায় অনেক কাহিনী প্রচিলিত আছে। যেমন- মসজিদ খানা আল্লাহর হুকুমে এক রাত্রে মাটি ফেটে গজিয়ে ওঠে, মসজিদের ভিতরের খুটিঁ চারটি বিভিন্ন সময়ে হাসি-কান্না করে, মসজিদের পিলার গুলোর কাছে যা আশা করা যায় তাই পাওয়া যায়, মসজিদের ইট বাড়িতে রাখলে উঁই পোকা লাগে না, মসজিদের ধুলি গায়ে মাখলে যে কোনো ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, মসজিদে এসে মানত করলে নিঃসন্তানদের সন্তান হয় ইত্যাদি। এ কথাগুলো বিশ্বাস করেই প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে বহু লোক নানা ধরণের মানত নিয়ে আসে।
যেভাবে যাবেন:
ফরিদপুর থেকে সড়ক পথে মাঝাকান্দি যেতে হবে। মাঝাকান্দি-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের সাতৈর নামক স্থানে এই মনজিদটি অবস্থিত।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.