মাদারীপুর জেলা, যার রয়েছে ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ। পঞ্চদশ শতাব্দীর সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহ্ মাদার (রঃ) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার পর আজকের এই মাদারীপুরের জন্ম।
মাদারীপুর জেলার পুরাকীর্তির বর্ণনা দিতে গেলে বেশ কিছু স্থানের নাম বলতে হয়। তার মধ্যে রাজারাম মন্দির অন্যতম। এটি মাদারীপুর জেলার প্রাচীনতম মন্দির। এ মন্দিরটি জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া গ্রামে অবস্থিত। সপ্তদশ শতাব্দিতে নির্মিত মন্দিরটি মহাকালকে উপেক্ষা করে আজো টিকে রয়েছে।
জানা যায়, তৎকালীন হিন্দু জমিদার কালীসাধক রাজারাম রায় চৌধুরী মন্দিরটি বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করেছিলেন। তবে নির্মাণের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে অনেকেই মনে করেন এটি ১৮২৫ সালের দিকে নির্মিত হয়েছিল। নির্মাতার নামেই এটি পরিচিত হয়ে উঠেছে। জমিদার রাজারাম রায় চৌধুরী নিজেই এ মন্দিরে পূজা করতেন।
চৌচালা ঘরের মতো দেখতে এই মন্দিরটি বাংলাদেশের গ্রামবাংলার নিজস্ব রীতিতে তৈরি। ২৩ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মন্দিরের দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট এবং উচ্চতা ৪৭ ফুট। দ্বিতল মন্দিরের টেরাকোটায় রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুণ দক্ষতায়।
এছাড়া মন্দিরের গায়ে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবী, পশু-পাখি ও লতা-পাতার অসংখ্য চিত্র। দক্ষ শিল্পীদের নিপুণ হাতের কারুকাজ শত বছর পরও মানুষের মন কাড়ে। মন্দিরের অলঙ্করণের জন্য ব্যবহৃত টেরাকোটায় রয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, রামায়ণ ও মহাভারতের নানা কাহিনি। মন্দিরের পাশে রয়েছে রান্নাঘর। এ রান্না ঘর থেকেই পূজার বিভিন্ন উপাচার ও উপকরণ তৈরি করা হতো।
মন্দিরটিতে মোট ৯টি কক্ষসহ একটি রান্নাঘর রয়েছে। যার মধ্যে নিচের তলায় ৩টি ও উপরের তলায় ৬টি কক্ষ। এছাড়াও পূজা আর্চনার জন্য রয়েছে আলাদা স্থান। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন রয়েছে।
যেভাবে যাবেন:
মাদারীপুর যাওয়ার জন্য খুব সকালে বের হতে হবে। গুলিস্তান/পোস্তাগোলা/বাবুবাজার ব্রীজ থেকে মাওয়াগামী যে কোনো বাসে উঠে শিমুলিয়া ফেরিঘাট। এখান থেকে স্পীড বোটে পদ্মা পার হতে হবে। চাইলে লঞ্চেও যেতে পারেন। লঞ্চ থেকে নামতে হবে কাওরাকান্দি। সেখান থেকে মাদারীপুরগামী যে কোনো বাস/মহেন্দ্রা/অটোতে উঠে নেমে পড়ুন টেকেরহাট বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে ভ্যানে খালিয়া শান্তিকেন্দ্রে যাওয়া যায়। ভ্যানওয়ালাকে বললেই রাজরাম মন্দির নামিয়ে দেবে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.