বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর দু’পাশে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান ‘পাথরঘাটা প্রত্নস্থল’ এর। এটি একাধিক প্রত্নঢিবি নিয়ে গঠিত একটি যৌগিক প্রত্নস্থল। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রত্নঢিবিগুলি হলো- মিশন, উচাই, বহারামপুর, নিমাই শাহের মাযার, বদের ধাপ, সাঁওতাল পাড়া, কাশিয়া বাড়ি এবং কুসুম্বা, গঙ্গরিয়াসহ ব্রিধিগ্রামের একাধিক ঢিবি।
প্লাইস্টোসিন যুগে গঠিত বরেন্দ্রভূমির লালমাটিতে অবস্থিত এসব ঢিবিগুলিতে স্থাপত্যিক নিদর্শনের প্রমাণ মিলেছে। পাথরঘাটার এই প্রত্নতত্ত্বের ৯ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে মৃৎপাত্রের খন্ডাংশ, গ্লেইজড মৃৎপাত্রের টুকরা, ইট, ইটের টুকরা, পোড়ামাটির ফলক, পাথরের ভাস্কর্য এবং অন্যান্য প্রত্নবস্তু ছড়িয়ে রয়েছে।
এসব ছাড়াও বিভিন্ন সময় খননের ফলে মৃৎপাত্রের অংশ, প্রাচীন ইটের টুকরা, পোড়ামাটির বস্তু, ভাষ্কর্যসহ আরও অনেক কিছু পাওয়া গিয়েছে। আরও পাওয়া যায় লৌহখন্ড, প্রাচীন মুদ্র, কাচ খন্ড, চুরি ও নিত্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু জিনিসপত্র।তাছারাও তুলসীগঙ্গা নদীর একস্থানে বেশকিছু ভারী পাথরখন্ড লক্ষ্য করা যায়, যা থেকে অনুমান করা হয় যে, সেখানে অতীতে একটি প্রস্তরনির্মিত সেতু অথবা ঘাট ছিল।
এই পাথরঘাটা প্রত্নস্থলে বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশীলায় তৃতীয়-দ্বিতীয় শতকের মৃৎপাত্রের টুকরার মত কিছু টুকরাও পাওয়া গিয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হয় পাথরঘাটায় নগরীটি হয়তো গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টীয় প্রথম বা দ্বিতীয় শতকের দিকে। সে দিক থেকে হিসেব করলে এ অঞ্চলের বয়স ২ হাজার বছরের একটু কম বা বেশি হতে পারে।
অদিযুগ ছাড়াও এখানে গুপ্ত ও পালযুগের কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে সুলতানী যুগের একটি মাজারও রয়েছে, যা নীমাই পীরের মাজার নামে পরিচিত। পাথরঘাটা প্রত্নস্থলের ইতিহাস কালানুক্রমে এখনো নিশ্চিতভাবে নির্ধারিত হয়নি। তবে প্রাচীন এ নগরীটি প্রচীন বিভিন্ন যুগে শিল্প ও সংস্কিৃতি চর্চার কেন্দ্র ছিল বলে মনে করা হয়।
যেভাবে যাবেন:
পাথরঘাটা প্রত্নস্থল এর অবস্থান রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায়। সেক্ষেত্রে এখানে যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি রাজশাহীর বাসে উঠতে হবে। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে জয়পুরহাট পৌঁছে যেকোনো সিএনজি বা রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারবেন পাঁচবিবি উপজেলার পাথরঘাটা প্রত্নতত্ত্বস্থলে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.