নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। নয়াবাদ জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে এর অবস্থান। ১.১৫ বিঘা জমির উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে।
মসজিদের প্রবেশের প্রধান দরজার উপর স্থাপিত ফলক হতে জানা যায় এটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্ব কালে ২ জৈষ্ঠ্য, ১২০০ বঙ্গাব্দে (ইংরেজি ১৭৯৩ সালে) নির্মাণ করা হয়। সেসময় জমিদার ছিলেন রাজা বৈদ্যনাথ। যিনি ছিলেন দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর।
এলাকার অধিবাসীদের থেকে জানা যায়, ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে কান্তনগর মন্দির তৈরির কাজে আগত মুসলমান স্থপতি ও কর্মীরা এই মসজিদটি তৈরি করেন। তারা পশ্চিমের কোনো এক দেশ থেকে এসে নয়াবাদে বসবাস শুরু করে এবং তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই মসজিদটি তৈরি করে।
মসজিদটি আয়তাকার তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর চারকোণায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১.১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মাঝের খিলানের উচ্চতা ১.৯৫ মিটার, প্রস্থ ১.১৫ মিটার। পাশের খিলানদ্বয় সমমাপের এবং অপেক্ষাকৃত ছোট। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে একটি করে জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহুখাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবের উচ্চতা ২.৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১.০৮ মিটার। দু’পাশের মিহরাব দু’টি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের তিনটি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ-এর মধ্যে মাঝেরটি অন্য দু’টির তুলনায় কিছুটা বড়। গম্বুজের অবস্থান্তর পর্যায়ে পেন্ডেন্টিভ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কার্নিশ এবং প্যারাপেট সমান্তরাল।
মসজিদের চার কোণের কর্নার টাওয়ারের মধ্যে ২টির উপর (উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম কোণের) কুপলা রয়েছে। বাকি দু’টির উপরের ছোট গম্বুজ। গম্বুজদ্বয় বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। কর্নার টাওয়ারগুলি সাদামাটা ইট ও পলেস্তারা দিয়ে তৈরি। কর্নার টাওয়ারের গায়ে চারটি ব্যান্ড আছে। টাওয়ারগুলি ক্রমশ সরু, উপরে ছোট গম্বুজ বাতিদানের মতো ছত্রী দেখা যায়।
মসজিদটা তৈরির সময় যে সকল টেরাকেটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল তার অধিকাশংই এখন নেই। যেগুলি রয়েছে সেগুলিও সম্পূর্ণ অক্ষত নয়। এখানে বর্তমান মোট ১০৪টি টেরাকোটা অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলি আয়তক্ষেত্রাকার এবং আকার ০.৪০মিটার x০.৩০ মিটার। ফলকগুলির মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় যে, একটিতে জোড়া ময়ূরের প্রতিকৃতিও রয়েছে। মোট ১০৪টি এরূপ আয়তাকার ফলক রয়েছে।
মসজিদটির পাশে একটি কবর রয়েছে। তবে কবর বা মসজিদে কোনো অংশেই এটি সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেয়া নেই। তবে কথিত আছে যে এটি মসজিদের কোনো নির্মাণ শ্রমিকের কবর।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.