মানিকগঞ্জ; অপরূপ রূপের এক জেলা - Hosted By আতিক বাবলা
মানিকগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এই জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। প্রথম মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৪৫ সালে। তখন এই মহকুমা ফরিদপুর জেলার অধীনে ছিল। পরে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ফরিদপুর জেলা থেকে ঢাকা জেলায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়।
মানিকগঞ্জ জেলার ভূ-ভাগ মূলত নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। পদ্মা, ব্রক্ষ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, করতোয়া ও বোরাসাগর প্রভৃতি নদী গুলো যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের ভূমি গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। সবুজ-শ্যামল প্রান্তর, রাশিরাশি বৃক্ষরাজি আর দিগন্ত জোড়া আকাশের নীলিমার সখ্যতা নিয়ে গড়ে উঠেছে মানিকগঞ্জ বন্দর। মানিকগঞ্জ জেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মন যেন হারিয়ে যায় বার বার। অপরূপ রূপের এক জেলা মানিকগঞ্জ।
মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণের ব্যাপারে জানা যায়, সংস্কৃত শব্দ ‘মানিক্য’ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। আর গঞ্জ শব্দটি ফরাসী। কিংবদন্তী আছে যে, অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগর গ্রামে আসেন ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে। তিনি এখানে একটি খানকা শরীফও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এ খানকা ছেড়ে হরিরামপুর উপজেলায় দরবেশ হায়দার সেখের মাজারে গমন করেন এবং তারপরে আবার ধলেশ্বরীর তীরে আসেন। এখানে এসেও তিনি খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। এ খানকাকে কেন্দ্র করে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে। মানিকশাহর অলৌকিক গুনাবলীর জন্য সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করতেন। প্রথম ও দ্বিতীয় খানকার ভক্তবৃন্দও এখানে এসে দীক্ষা নিতো। এভাবে আস্তে আস্তে ধলেশ্বরী তীরে মানিক শাহ’র খানকাকে কেন্দ্র করে জনবসতি ও অনেক মোকাম তৈরি হয়। অনেকে বলেন দুর্ধর্ষ পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে এই মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি হয়।
মানিকগঞ্জ জেলায় কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তারমধ্যে আরিচা ঘাট এই এলাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এছাড়া তেওতা জমিদার বাড়ি, জাফরগঞ্জ বেড়িবাঁধ, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বালিয়াটি প্রাসাদ ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের কাছে জায়গা করে নিয়েছে।
এই জেলার পুরাকীর্তির ইতিহাসে বালিয়াটির জমিদারদের অবদান উল্লেখযোগ্য। বালিয়াটির জমিদারেরা ঊনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আরম্ভ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এই বালিয়াটিতে আজও দু’বেলা রাধা বল্লব পূজো হয়। বালিয়াটিতে ১৯২৩ সালের দিকে জমিদার কিশোরী রায় চৌধুরী নিজ খরচে একটি এলোপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন, যা সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দৃষ্টিনন্দন এই প্রাসাদের রক্ষনাবেক্ষণ করছে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.