বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। তার জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত লোকগাঁথা আজও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। সে সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও কিশোরগঞ্জের পাতুইয়ার গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির। ইতিহাস ও ভ্রমণপ্রিয় মানুষ মন্দিরটি দেখতে ছুটে যান কিশোরগঞ্জে।
চন্দ্রাবতী মন্দির বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। প্রকৃতপক্ষে মন্দিরটি একটি শিব মন্দির। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাধীন মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিবমন্দিরটির অবস্থান।
চন্দ্রাবতী মন্দিরিটি আকৃতিতে অষ্টভুজাকৃতির। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৩২ ফুট। এর আত বাহুর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। মন্দিরের নিচতলায় আছে একটি কক্ষ ও তাতে প্রবেশের পথ। কক্ষের ভেতরে রয়েছে ৭টি কুলুঙ্গি। মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় আছে একটি প্রশস্ত কুলুঙ্গি এবং পোড়ামাটির সুদৃশ্য কাজ। দ্বিতীয় তলা থেকেই মন্দিরটি ক্রমশ সরু হয়ে ৩২ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে প্রত্নতত্ত্ব মন্দিরটির কিছু অংশ সংস্কার করা হয়।
ষোড়শ শতকের ‘মনসা মঙ্গল’-এর বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা ও বঙ্গের আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী শিবমন্দিরটি মূলত তার বহু কাহিনী ও ঘটনাকে ধারণ করে। ষোড়শ শতকের দ্বিতীয় ভাগে কবি চন্দ্রাবতীর জন্য নির্মিত হয় এই মন্দিরটি। কবি চন্দ্রাবতী ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধারী ও সম্ভাবনাময় সাহিত্যিক।
নয়নঘোষ প্রনীত পালাগান ‘চন্দ্রাবতী’ থেকে জানা যায় যে, কৈশোরে চন্দ্রাবতী ও স্থানীয় এক ব্রাহ্মনযুবক জয়ানন্দের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের এ ভালোবাসা চন্দ্রাবতীর পিতা বংশীদাস মেনে নেন। কথা অনুযায়ী তিনি তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ানন্দ কথা রাখেননি। জয়ানন্দ এক মুসলিম রমণীকে (কমলা) বিয়ে করেন। কমলাকে বিয়ে করার জন্য জয়ানন্দ ধর্মান্তরিতও হন।
এই ঘটনায় চন্দ্রাবতী ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি পিতার কাছে এসময় তার উপাসনার জন্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া চন্দ্রাবতী সিদ্ধান্ত নেন তিনি চিরকুমারী থাকবেন। তার পিতা কন্যার আবদার অনুযায়ী ফুলেশ্বরী নদী তীরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে এখানো পর্যন্ত কালের সাক্ষী হয়ে ফুলেশ্বরী নদীতীরে দাঁড়িয়ে আছে ‘চন্দ্রাবতী মন্দির’।
যেভাবে যাবেন:
চন্দ্রাবতীর মন্দির দেখতে হলে ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে অথবা মহাখালি বা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কিশোরগঞ্জে যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ থেকে অটোরিকশা বা রিকশায় নীলগঞ্জ হয়ে পৌঁছতে হবে পাতুইয়ার গ্রামে। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পাতুইয়ার গ্রামের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.