গান্ধী আশ্রম; ঐতিহাসিক নিদর্শন - Hosted By sumaya linda
নোয়াখালী জেলার অন্যতম একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘গান্ধী আশ্রম’। জেলা সদর মাইজদী কোর্ট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনামুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে এর অবস্থান। তৎকালীন জমিদার প্রয়াত ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে এই গান্ধী আশ্রম স্থাপিত হয়। বর্তমানে গান্ধী আশ্রম নোয়াখালীর একটি সেবামূলক সংগঠন হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে।
গান্ধি আশ্রমে গান্ধিজির নামে একটি জাদুঘরও আছে। ‘অহিংস’ সমাজ প্রতিষ্ঠায় গান্ধীর কর্মময় জীবনকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন দুর্লভ ছবি, বই ও জিনিসপত্র নিয়ে ২০০০ সালের ২ অক্টোবর গান্ধী আশ্রমের মূল ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিদিন (সোম থেকে শনিবার) সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস সমাজ গঠনে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকার নানা দিক দেখতে।
জাদুঘরে সংরক্ষিত গান্ধীর কর্মময় জীবনের কিছু কথা ও ছবি যে কারো চিন্তার জগতকে নাড়া দেবে। কোনো ব্যক্তির স্মৃতি কিংবা ব্যক্তিজীবনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন জাদঘুর সত্যিই বিরল।
জাদুঘরে প্রবেশ করতেই মহাত্মা গান্ধীর বিশাল আব মূর্তি সবার নজর কাড়ে। গান্ধীজির শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩০টি ছবি শোভা পাচ্ছে এ জাদুঘরে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় বিলাতি পোশাক বর্জনের ডাক দিয়ে গান্ধী যে চরকায় সুতা কাটতেন, জাদুঘরে সংরক্ষিত সেই চরকা এখনো মানুষের চিন্তাকে নাড়া দেয়।
ব্যতিক্রমধর্মী এ প্রতিষ্ঠানটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের শেষভাগে সারা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তখন পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রভাব এসে পড়ে নোয়াখালীতে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় সাম্প্রদায়িকতার তাণ্ডবলীলা দেখা দেয়। মশালের আগুনে পুড়ে যায় বহু সাজানো সংসার, সবুজ মাটি লাল হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তের প্লাবনে। শান্তি মিশনের অগ্রদূত হয়ে নোয়াখালীতে ছুটে আসেন অসহযোগ ও অহিংস আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা গান্ধী।
১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর চৌমুহনী রেলস্টেশনে প্রথম মহাত্মাগান্ধী নোয়াখালীর মাটিতে পদার্পন করেন। তৎকালীন এম.এল.এ. শ্রী হারান ঘোষ চৌধুরীর উদ্যোগে নোয়াখালীর প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় চৌমুহনীতে। মহাত্মা গান্ধী সে জনসভায় প্রথম বক্তৃতা করেন। তারপর জনসভা করেন দত্তপাড়া গ্রামে। ধারাবাহিকভাবে চলে তার পরিক্রমা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি জয়াগ গ্রামে এসে পৌঁছেন।
সেদিনই নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার জয়াগ গ্রামের কৃতী সন্তান হেমন্তকুমার ঘোষ তার সকল সম্পত্তি গান্ধীজির আদর্শ প্রচার এবং গান্ধীজির স্মৃতি সংরক্ষণের একটি ট্রাস্ট এর জন্য দান করেন এবং গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরিচালনার ভার দেয়া হয় গান্ধীজীর স্নেহভাজন, জনসেবা ব্রতী, চিরকুমার শ্রীযুক্ত চারু চৌধুরী মহাশয়ের ওপর। ট্রাস্টটি প্রথমে আম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হলেও ১৯৭৫ সালে এটির নাম পরিবর্তিত হয়ে গান্ধি আশ্রম ট্রাস্টে পরিনত হয়।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে যেতে হবে নোয়াখালীর মাইজদি। সেখান থেকে সোনাইমুড়ীগামী যেকোনো লোকাল বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশা করে জয়াগ বাজার নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে আধা কিলোমিটার পূর্বে গেলে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছা যাবেন।
এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনযোগেও যাওয়া যাবে। ট্রেনে করে নামতে হবে মাইজদি স্টেশনে। সেখান থেকে সোনাইমুড়ী গামী যেকোনো লোকাল বাস অথবা সিএনজি অটোরিক্সা করে গান্ধী আশ্রমে যাওয়া যায়।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.