ভাসমান পেয়ারা বাজার। ভাবলেই চোখে পড়ে পানির ভিতর সারি সারি নৌকায় পেয়ারার বেচাকেনা। এমনি কিছু ভাসমান বাজারের দেখা মিলবে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝালকাঠী, বরিশাল ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন খালে। সীমান্তবর্তী এইসব এলাকায় সবচেয়ে বড় পেয়ারা বাগানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এইসব ভাসমান বাজার। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে রয়েছে সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। এছাড়া স্বরূপকাঠীর আটঘর এবং কুড়িয়ানাতেও বসে এই ভাসমান হাট।
ভিমরুলি হাট:
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় ফলচাষিরা নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান। তবে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সারা বছরই বসে ভাসমান হাট। তবে পেয়ারার মৌসুমে হয় জমজমাট বাজার। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই ভরপুর পেয়ারা বাগান। এসব বাগান থেকে চাষিরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন।
ভিমরুলি ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। আকর্ষণীয় দিক হল এখানে আসা সব নৌকাগুলোর আকার আর ডিজাইন দেখতে প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা।
ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হল দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে ইজিবাইকে করে এই হাটে আসতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। আর আপনি চাইলে নৌকায়ও আসতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। দর্শক আমি বলবো নদী পথেই আসতে। কারন নদীর দুই পাশের সময় মনোরোম প্রকৃতি দেখতে দেখতে সময়টা ভালই কাটবে আপনার।
আটঘর–কুড়িয়ানা:
গ্রামের নাম আটঘর-কুড়িয়ানা। পেয়ারার জন্য দেশব্যাপী এর খ্যাতি। এজন্য গ্রামের নাম ছাপিয়ে পেয়ারার গ্রাম বলে পরিচিত। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী থানা সদর থেকে ৮ কি.মি. পূর্ব দিকে এই গ্রামের অবস্থান। মাইলের পর মাইল চোখে পড়বে কেবল পেয়ারার বাগান। কবে থেকে এই এলাকায় পেয়ারার চাষ শুরু হয়েছিল তা নিয়ে কয়েকটি ভিন্নমত প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলে প্রায় দুই শ’ বছর আগে তীর্থ করতে এখানের কোন একজন ভারতের বিহার রাজ্যের গয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে এই ফল দেখে চাষ সম্পর্কে অবগত হয়ে বীজ এনে বপন করেছিলেন আটঘর- কুড়িয়ানাতে। স্থানীয়রা অনেকেই এই ফল কে গইয়া নামে ডাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের আয়ের একমাত্র উৎস এই গইয়া বা পেয়ারা। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পেয়ারার মৌসুমে এই গ্রামের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। দূর দূরান্ত এলাকা থেকে পাইকার আসে। বরিশাল ছাপিয়ে ফরিদপুর হয়ে রাজধানীসহ দেশের অনান্য অঞ্চলেও পৌঁছে যায় এখানকার পেয়ারা।
ও একটা ব্যাপার বলতে ভুলে গেছি মিষ্টি প্রেমিরা কুড়িয়ানা গেলে সেখানকার বাজার না ঘুরে চলে আসবেন না। অবশ্যই নরেন বিশ্বাসের ঋতুপর্ণা মিষ্টান্নভাণ্ডারে এক বারের জন্যে হলেও ঢুঁ দেবেন। কারন কুড়িয়ানা বাজারের সুস্বাদু রসমঞ্জুরি ও মালাইের বিশেষ খ্যাতি আছে। আমি নিজেও ট্রাই করেছি, কী বলব, অপূর্ব সেই স্বাদ, যা এখনো মুখে লেগে আছে। এজন্যে যারা যাবেন তাদের বলবো মিষ্টি খাওয়ার জন্য হলেও কুড়িয়ানা বাজারে যাবেন।
এবার ফেরার পালা, তবে বরিশাল আসার পথে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া এলাকার চাংগুরিয়ায় অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স না দেখে আসবেন না। এত সুন্দর মসজিদ আপনি খুব কমই দেখেছেন। ১৪ একর জমির উপর নির্মিত মসজিদটির স্তম্ভটি মুসলমানদের ২১টি পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে বানানো হয়েছে।
যেভাবে যাবেন:
ভাসমান পেয়ারা বাজারে অনেকভাবে যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল লঞ্চে বা গাবতলী থেকে বাসে যেতে পারেন। লঞ্চের ডেকে ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা করে। কেবিন নিলে লঞ্চভেদে এক হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে ভিভিআইপি কেবিনে আরও বেশি খরচ পড়বে। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে প্রথমে মাহেন্দ্র অটোতে বা সিএনজি করে বানারীপাড়া অথবা স্বরূপকাঠী যেতে পারেন। বানারীপাড়া যেতে মাহেন্দ্রতে ভাড়া নেবে ৫০-৬০ টাকা করে। তারপর সেখান থেকে রিকশা অথবা অটোতে যাবেন কুড়িয়ানা। একটু হেঁটে একটা ব্রিজ পার হয়ে আবার অটোতে করে চলে যেতে পারবেন আটঘর কুড়িয়ানা বাজারে। ভীমরুলি যেতে চাইলে বানারীপাড়া থেকে নৌকা বা ট্রলারে যাওয়াই ভালো। ভীমরুলি, আটঘর কুড়িয়ানাসহ আরো অনেক ছোট বাজার ও বাগান ঘুরিয়ে আনার জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া নেবে ছোট ট্রলারগুলো। আর বড় ট্রলারগুলোর ভাড়া পড়বে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। অবশ্যই দামাদামি করে ভাড়া ঠিক করবেন।
আরেকটি পথ হচ্ছে ঢাকার সদরঘাট থেকে হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়াগামী যে কোনো লঞ্চে চড়ে ভোরে বানারীপাড়া অথবা পরের লঞ্চঘাট স্বরূপকাঠী নেমে সেখান থেকেই ট্রলার রিজার্ভ করা যায়।
কোথায় খাবেন:
ভীমরুলী, আটঘর কুড়িয়ানা বাজারের পাশেই খাবারের হোটেল আছে মোটামুটি মানের। অথবা জেলা সদরে ফিরে এসেও খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন:
আপনি দিনে গিয়ে দিনেও ফিরে আসতে পারেন। আর রাতে থাকতে চাইলে বরিশাল চলে আসতে পারেন। স্বরূপকাঠী অথবা এর অদূরে চাখারে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। অথবা ঝালকাঠী শহরে গিয়েও হোটেল, রেস্টহাউস বা ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন।
Listing Features
Tags
Gallery - Photos
Items Reviewed - 1
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.
Ali Faisal Dip
nice place for travel in rainy season
September 12, 2018 11:50 pm