প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ‘এগারো শিব মন্দির’ - Hosted By Ali Faisal Dip
বাংলাদেশের যশোর জেলার প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার একটি ‘এগারো শিব মন্দির’ বা ‘১১ শিব মন্দির’। একটি কিংবা দুটি নয়, একসাথে ১১টি শিব মন্দিরের অবস্থান রয়েছে এই জায়গাটিতে। প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই শিব মন্দিরগুলোর সাথে জড়িত আছে নানা ইতিহাস।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ভৈরব নদীর তীরে এই প্রাচীন স্থাপনাটি অবস্থিত। সদর উপজেলা থেকে এর দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার।
সতেরো শতকের মাঝামাঝিতে রাজা নীলকণ্ঠ রায় এই মন্দিরগুলো স্থাপন করেন। মন্দির নির্মাণে ব্রিটিশ আমলে অনুসৃত চুন সুরকি এবং ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। ইটের আকৃতি পাতলা ও বর্গাকার। চুন-সুরকির প্রলেপ ধরে রেখেছে ইটগুলোকে।
১১টি মন্দিরের মধ্যে সর্ব উত্তরের মন্দিরটি মূল মন্দির। মূল মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট ৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ ২২ ফুট ৩ ইঞ্চি। দেয়ালের প্রস্ত ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি। প্রধান মন্দিরের দুই পাশে পূর্ব ও পশ্চিমে ৪টি করে মোট ৮টি ও প্রবেশপথের দুই দিকে ২টিসহ মোট ১০টি অপ্রধান মন্দির রয়েছে।
১১টি মন্দিরে ১১টি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ ছিল, যা চুরি হয়ে যায়। মন্দিরের বাইরে দক্ষিণ দিকে আছে একটি প্রধান প্রবেশপথ। প্রতিটি মন্দিরে প্রবেশের জন্য আছে খিলানাকৃতির দরজা ও দেয়ালে পোড়ামাটির ফলক ও অনিন্দ্যসুন্দর কারুকাজ। মন্দিরের চারদিকে প্রাচীর বেষ্টিত। উত্তর-পশ্চিম কোণে একসময় পুকুর ছিল।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, যশোরের তৎকালীন রাজা নীলকণ্ঠ রায় ছিলেন রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর। তার রাজধানী ছিল চাঁচড়া। তিনি কিন্তু তিনি বসবাস করতেন অভয়নগরে ভৈরব নদীর পাড়ে। রাজা তার মেয়ে অভয়াকে বিয়ে দেন নড়াইলের জমিদারের ছেলে নীলাম্বর রায়ের সাথে। বিয়ের কিছু দিন পর নীলাম্বর দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অল্প বয়সে বিধবা হয় অভয়াদেবী।
সে সময়ে হিন্দু ধর্মে দ্বিতীয় বিবাহের কোনো নিয়ম না থাকায় অভয়া বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটাতে চায়। নীলকণ্ঠ মেয়ের অনুরোধে ১৭৪৫ সাল থেকে ১৭৬৪ সালের মধ্যে ১১টি শিব মন্দির স্থাপন করেন এবং মেয়ের নামে নগরীর নাম রাখেন অভয়নগর। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০১৪ সালে এই স্থানে সংস্কার কাজ শুরু করে, যা শেষ হয় ২০১৭ সালে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে করে যেতে হবে যশোরের অভয়নগর। সেখান থেকে অটো বা মোটর সাইকেলে করে ভৈরব নদীর পাড়ে ভাটপাড়া বাজার যেতে হবে। ঘাট থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে বামে আধা কিলোমিটার গেলেই মন্দিরটি চোখে পড়বে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.