ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও প্রাচীন হওয়ার সুবাদে কিশোরগঞ্জে বেশ কিছু পুরাকীর্তি স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে ঈশা-খাঁর ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দূর্গ অন্যতম। যা ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের আজও মুগ্ধ করে থাকে। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর অবস্থিত।
এগারসিন্ধুর দুর্গ ছিল মধ্যযুগের বাংলার একটি দুর্গ। বারো ভুঁইয়াদের নেতা ঈসা খান মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই দুর্গ ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে এই দুর্গের অস্তিত্ব নেই। এগারসিন্দুরে রয়েছে- এগারসিন্দুর দুর্গ, বেবুথ রাজার দিঘি, সাদী মসজিদ, শাহ মাহমুদ মসজিদ। এটি ঈশা খাঁর শক্ত ঘাঁটি ছিল।
জনশ্রুতি আছে, বেবুধ নামক এক কোচ উপজাতি প্রধান ষোড়শ শতাব্দীতে এই দুর্গ নির্মাণ করে এটিকে তার রাজধানীতে পরিণত করেন। এখানে পুরনো একটি দিঘি রয়েছে যেটিকে ‘বেবুধ রাজার দিঘি’ বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় যে, এ দিঘির পাড়েই রাজপ্রাসাদ অবস্থিত ছিল। ঈশা খাঁ বেবুধ রাজার কাছ থেকে দুর্গটি দখল করে নেন এবং একে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেন।
দুর্গে প্রায় ৬০ ফুট চওড়া মাটির দেয়াল ছিল। এর তিন দিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল এবং এক দিকে পরিখা খনন করে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা ছিল।
বারো ভুঁইয়াদের প্রধান ঈসা খান এগারসিন্ধুর দুর্গ দখল করে শক্তিশালী সামরিক ঘাটিতে পরিণত করেন। মুঘল বাদশাহ আকবর বাংলা জয়ের সময় ১৫৯৮ সালে তার সেনাপতি মানসিংহ দুর্গ আক্রমণ করেছিলেন।
পরবর্তীতে অহোম রাজ্য ১৭ শতাব্দীতে দুর্গটি দখল করে নেয়। সুবাদার ইসলাম খান তাদের পরাজিত করেন। তিনি দুর্গটি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৯৭ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পে দুর্গের বাকি অংশগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে দুর্গের ভেতরে উঁচু একটি ঢিবি পাওয়া যায়, যেখান থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কামান দাগানো হতো।
দুর্গ না থাকলেও ১৭ শতাব্দীর দুটি মসজিদ এখনো টিকে রয়েছে। এগুলো হল ১৬৫২ সালে নির্মিত সাদী মসজিদ ও ১৬৯৭ সালে নির্মিত শাহ মুহাম্মদ মসজিদ। সাদী মসজিদ বর্গাকার এবং আট কোণাকার মিনারবিশিষ্ট।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দুর্গটি তৎকালীন সময়ে বানার, শীতলক্ষা, আড়িয়াল খাঁ, গিয়র সুন্দা ইত্যাদির সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এগারসিন্ধুর নামটি উদ্ভব হয়।
১১টি নদীর মোহনায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উঁচু শক্ত এঁটেল লাল মাটির এলাকা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গঞ্জের হাট নামে প্রসিদ্ধ ছিল। গঞ্জের হাট ১১টি নদীর সঙ্গমস্থলে হওয়ায় তখনকার জ্ঞানী-গুণীজন ওই ১১টি নদীকে সিন্দু নদ নামে আখ্যায়িত করে স্থানটির নামকরণ করা হয় এগারসিন্দুর। এটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.