ঐতিহ্যবাহী হাইল হাওরের ‘বাইক্কা বিল’ না দেখলে শ্রীমঙ্গলের কিছুই যেন দেখা হয় না। শ্রীমঙ্গলে অবস্থতি বাইক্কা বিল হাইল হাওরের প্রাণ। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম। এক সময় শুধু শীত কালে এখানে অতিথি পাখি আসতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বাইক্কা বিল পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। বার মাসই সেখানে পাখি দেখা য়ায়। এখানে হাজারও পাখির উপস্থিতি ও কলতান আপনাকে পুলকিত করবে।
ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং মৌলভীবাজার জেলার প্রখ্যাত চা-সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম ‘বাইক্কা বিল’। ২০০৩ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় এই বিলটিকে মৎস্য সম্পদের একটি অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। আইড়, কই, মেনি, ফলি, পাবদাসহ আরো অনেক প্রজাতির মাছ এখানে বংশবৃদ্ধি করে পুরো হাওড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিল মাছের জন্যেই শুধু নয়, পাখি এবং অন্যান্য অনেক প্রাণীর জন্যও একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থল। এটি একটি নয়নাভিরাম জলাভূমি, যেখানে হাজারো শাপলা আর পদ্ম ফুল ফোটে। এছাড়া এই বিলের বুনো বাসিন্দা আর শীতে আগত পরিযায়ী বা অতিথি পাখিদের ভালোভাবে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বিলের কিনারে ফোটে হাজারো কচুরিপানা, শাপলা আর পদ্মফুল। বিলের পানিতে সকাল-সন্ধ্যা চলে রঙ্গীন ফড়িংয়ের বিরতিহীন উড়াউড়ি।
প্রকৃতিপ্রেমীর চোখে পাখিই এই অভয়াশ্রমের সেরা প্রাণী। শীত মৌসুমে এখানে আসে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। এই বিলের উল্লেখযোগ্য পাখি- পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, গোবক, ধুপনিবক, রাঙ্গাবক, দলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, শঙ্খ চিল, পালাসী কুড়া ঈগল। শীতের অতিথি হয়ে এই বিলে আসে অনেক জাতের সৈকত পাখি। এদের মধ্যে- গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা চিটি আর কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতি সরালী, রাজসরালী, মরচেরং, ভূতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঙ্গাহাঁস, গুটি ঈগল ।
২০১১ সালের এক গবেষণায় বাইক্কা বিলে ২০৩ প্রকার পাখি শনাক্ত করা হয়েছে; যার মধ্যে অতিথি পাখি ১৫৩টি এবং স্থায়ী বসবাসকারী পাখি ৫০টি। বাইক্কা বিলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় এখানে পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
দেশীয় ও অতিথি পাখির চলাচল, গতিবিধি, পর্যবক্ষেণ ও পাখির জীবনাচরণের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং দীর্ঘমেয়াদি গবেষেণার জন্য পাখিদের পায়ে রিং পরানো হয়েছে। ২০১১ সালে ৩১ প্রজাতির পাখির পায়ে শনাক্তকারী আংটি পরানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১৭ প্রজাতির অতিথি পাখি এবং ১৪ প্রজাতির স্থায়ী বসবাসকারী পাখি। ২০১১ সালে এখানে নতুন ৪টি পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষকদের মতে ওগুলেো হলো: বড়ঠুঁটি নলফুটকি, উদয়ী নলফুটকি, বৈকাল ঝাড়ফুটকি ও সাইক্সের ফুটকি।
বাইক্কা বিল একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে। সব ঋতুতেই সুন্দর এই বিলটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় ভ্রমণের জন্য সেরা। এ সময় এখানে প্রচুরসংখ্যক পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।
যেভাবে যাবেন:
বাস, ট্রেন বা বিমান যেভাবেই যান না কেনো প্রথমে আপনাকে মৌলভীবাজার অথবা শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামতে হবে। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তা। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। বাজারটি ‘ঘাটের বাজার’ নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে বা পায়ে হেঁটে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে গেলে বাইক্কা বিল।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.