দেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ‘হলুদ বিহার’। এটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামে অবস্থিত। হলুদ বিহার গ্রামটি স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামেও পরিচিত। জনশ্রুতি আছে, বর্ষাকালে হলুদ বিহার ঢিবিটি দ্বীপের মতো দেখাত, যার ফলশ্রুতিতে এটি দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিতি পায়।
হলুদ বিহার গ্রামে মূলতঃ চারটি ঢিবি থাকলেও বর্তমানে কেবল ১০০ ফুট ব্যাসের একটি মাত্র ঢিবি রয়েছে। ঢিবিগুলো ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো বেশ কিছু স্থাপনার ধ্বংসবাশেষ দেখে ধারণা করা হয়ে থাকে, এই স্থানটিতে পূর্বে বৌদ্ধদের বসতি ছিল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুসন্ধানে এটি একটি বৌদ্ধ বিহার বলে ধারণা পাওয়া যায়। কিছু কিছু ঐতিহাসিকরা এটিকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের সম-সাময়িক বলেই মনে করেন। তবে এর নির্মাণে শুধু সিঁড়ির ইটের সঙ্গে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরের পশ্চিম পাশের ইটের মিল পাওয়া যায়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময় হলুদ বিহারে বেশ কয়েকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও সংস্থা ভ্রমণ করে এলাকাটি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেন। ১৯৩০ বা ১৯৩১ সালে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ জি.সি দত্ত ভারতের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ বিভাগের অধীনে এলাকাটি পরিদর্শন করেন। তিনি তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, পুরো অঞ্চলটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৬৪.৫ মিটার ও উত্তর থেকে দক্ষিণে ৪০.৫ মিটার এবং সংলগ্ন ভূমি হতে অঞ্চলটির উচ্চতা প্রায় ১০.৫ মিটার। এসময় গ্রামের একটি স্থান থেকে প্রায় ১ মিটার উঁচু একটি গণেশের ব্রোঞ্জ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে, মূর্তিটি ৮-৯ শতকের দিকে তৈরি।
প্রত্নতত্ত্ববিদ কাজী মোহাম্মদ মেছের তার রাজশাহীর ইতিহাস নামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হলুদ বিহার ডিবি থেকে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে কালো পাথরের তৈরী একটি বুদ্ধ মূর্তি, কয়েকটি পোড়ামাটির চিত্রফলক এবং কিছু প্রাচীন মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই এলাকাটিতে অনুসন্ধানের জন্য ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন সুপারিন্টেন্ডেন্ট হারুন-অর-রশীদকে প্রেরণ করেছিল। তিনিও তার প্রতিবেদনে এ অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ, পোড়ামাটির ফলক ও পাথরের ভাস্কর্য দেখতে পান বলে উল্লেখ করেন।
এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থানটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ১৯৮৪ ও ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে দুটি খননকার্য পরিচালনা করে।
যেভাবে যাবেন:
নওগাঁ জেলা শহর থেকে সড়কপথে বদলগাছী উপজেলা সদর সহজেই যাওয়া যায়। সেখান থেকে সড়কপথে ভান্ডারপুর বাজার হয়ে কোলার হাট, তারপর হলুদ বিহার পৌছাঁনো যায়। রেলপথে ভান্ডারপুর বাজার, তারপর হলুদ বিহার যাওয়া যায়। তাছাড়া পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে হলুদ বিহার। সেখান থেকেও হলুদ বিহার যাওয়া যায়।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.