সাতগাছিয়া ঐতিহাসিক আদিনা মসজিদ বা সাতগাছিয়া গায়েবানা মসজিদ বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। এটি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়ন থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাতগাছিয়া গ্রামে অবস্থিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে বিরাট আকারের ঢিবির কিছু অংশ স্থানীয় জনগণ খনন করে। খননের ফলে ১৬টি থাম ও পোড়ামাটির নকশাসহ ৫টি মেহরাব বিশিষ্ট চমৎকার এই মসজিদের সন্ধান মেলে। পরে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯০ সালে খনন করে ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির ধংসাবশেষের অস্তিত্ব খুঁজে পায়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, পঞ্চদশ শতাব্দীতে খান জাহান আলী তার অনুচরদের নিয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে বাংলায় আসেন। সেই সময়েই তার কোন অনুচর কর্তৃক এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে মাটি চাপা পরে।
আয়তাকার সাতগাছিয়া মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ২৪.২৫ মিটার দীর্ঘ ও পূর্ব-পশ্চিমে ১৮.৫৫ মিটার প্রশস্ত। দেয়াল ১.৬০ মিটার পুরু। ভূমি থেকে প্রায় ১.৮৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু উদ্ধার করা হয়েছে মসজিদটি। উত্তরে ৩টি, দক্ষিণে ৫টি, পূর্বে ৭টি ও পশ্চিমে ১টি দরজা রয়েছে। পশ্চিম দিকের দরজাটি স্থানীয় জনগণ বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্বদিকে সর্বাধিক ৭টি দরজা থাকার কারণে এইদিককেই মসজিদের সম্মুখ ভাগ হিসেবে ধরা হয়।
দরজাগুলো ১.৩০ মিটার চওড়া এবং উপরে সরু খিলামের বক্র রয়েছে। খিলামগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। দুই দরজার মধ্যে তলদেশ থেকে দেয়ালে রয়েছে খাড়া খাজ কাটা দিগন্ত রেখাকৃতির বাঁধন। খাজগুলি ০.৬৫ মিটার চওড়া এবং ০.১৩ মিটার গভীর। খাজের উপরের বাঁধনে আছে বুটিদার নকশার দিগন্ত রেখার সারি। নিচের বাঁধনগুলো সমান।
মসজিদের মূল ইমারতটি ৩৫ গম্বুজ বিশষ্ট ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এর প্রার্থনা কক্ষটি ৭টি আইল ও ৫টি বে-তে বিভক্ত এবং ৬ সারিতে মোট ৪টি করে ২৪টি নিরাবলম্ব স্তম্ভে বিন্যাস্ত। চারকোণের চারটি স্তম্ভ ছিল গোলাকার টারেটে আচ্ছাদিত। ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট সাতগাছিয়া মসজিদটির সঙ্গে ষাটগম্বুজ মসজিদের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
মসজিদের সাতটি মিহরাবের মধ্যে চারটি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলি ফুল, ফুলের কুঁড়ি, পাতা, বৃক্ষ, ঘন্টা, চেইন প্রভৃতি নকশা দ্বারা অলংকৃত। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তর দিকে একটি বন্ধ প্রবেশদ্বার রয়েছে। এটি ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রবেশদ্বারের সঙ্গে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। মেঝে তিনটি প্লাটফর্মে বিভক্ত। কেবলা দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি পিটানো কংক্রিটের প্লাটফর্ম। মসজিদের ভিতরে ৪৮টি পিলার রয়েছে।
বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে এ মসজিদের ভিতরকার নির্মাণ পরিকল্পনার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণকাল পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিক। নির্মাণ ও পরিকল্পনায় সাদৃশ্য থাকার কারণে আদিনা মসজিদের নির্মাণ কালও এটাই ধরা হয়। এ মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদের অন্যতম বলা যায়।
যেভাবে যাবেন:
রাজধানী থেকে খুব সহজে সাতগাছিয়া মসজিদ ভ্রমণে যাওয়া যায়। রাজধানী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাসে করে সরাসরি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে যাওয়া যায়। যানজটের ঝামেলা এড়াতে চাইলে ট্রেন কিংবা বিমানে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে নামতে হবে যশোর। যশোর থেকে বাস অথবা সিএনজিতে করে বারোবাজার যেতে হবে। বারোবাজার থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই পেয়ে যাবেন সাতগাছিয়া মসজিদ।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.