বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা সন্দ্বীপ। এটি আমাদের দেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ। ইউরোপীয়দের লেখা ইতিহাসে জানা যায়, সন্দ্বীপে প্রায় তিন হাজার বছরের অধিককাল ধরে লোক বসতি বিদ্যমান। এমনকি একসময় এর সাথে সংযুক্ত থাকা নোয়াখালীতে মানুষের বসতি স্থাপনের পূর্বেই সন্দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছিল।
পূর্বে সন্দ্বীপের লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্র শিল্প পৃথিবী খ্যাত ছিল। উপমহাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এই অঞ্চলে এসে তাদের জাহাজ নোঙ্গর করতেন। সহজ বাণিজ্য ব্যবস্থা ও পরিবহন সুবিধাদি থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহও দেখাতেন।
সন্দ্বীপ এক সময় কম খরচে মজবুত ও সুন্দর জাহাজ নির্মানের জন্য পৃথিবী খ্যাত ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এই জাহাজ রপ্তানি করা হতো। তুরস্কের সুলতান এই এলাকার জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ কিনে নেন। ভারতবর্ষের মধ্যে সন্দ্বীপ ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সন্দ্বীপ ভ্রমণের সময়কার স্মৃতির পটভুমিকাতেই তার মধুবালা গীতিনাট্য রচনা করেন। এছাড়া তার চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের অনেকগুলো কবিতা এই দ্বীপে অবস্থানকালেই রচনা করেছিলেন।
সন্দ্বীপের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত শোনা যায়। কারও কারও মতে বার আউলিয়ারা চট্টগ্রাম যাত্রার সময় এই দ্বীপটি জনমানুষহীন অবস্থায় আবিষ্কার করেন এবং নামকরণ করেন ‘শুণ্যদ্বীপ’, যা পরবর্তীতে ‘সন্দ্বীপে’ রুপ নেয়। তবে ইতিহাসবেত্তা বেভারিজের মতে চন্দ্র দেবতা ‘সোম’ এর নামানুসারে এই এলাকার নাম ‘সোম দ্বীপ’ হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ‘সন্দ্বীপে’ রুপ নেয়।
কেউ কেউ দ্বীপের উর্বরতা ও প্রাচুর্যের কারণে দ্বীপটিকে ‘স্বর্ণদ্বীপ’ আখ্যা প্রদান করেন। উক্ত ‘স্বর্ণদ্বীপ’ থেকেই ‘সন্দ্বীপ’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৫৪ সালের পরে সন্দ্বীপকে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা:
বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়েও যেতে পারবেন সন্দ্বীপে। দ্বীপ থেকে মূল ভুখণ্ডে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বি.আই.ডব্লিউ.টি সি. এর ২টি স্টীমার ঘাট এবং ৫টি জেলা পরিষদ ফেরীঘাট। এছাড়াও এ উপজেলার অভ্যন্তরে সড়ক যোগাযোগের জন্য ৭৩ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ১৯ কিলোমিটার আধা-পাকারাস্তা ও ৮৬২ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা রয়েছে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.