রাজবাড়ী; কীর্তিমান রাজনীতিবিদের জন্মভূমি - Hosted By Ali Faisal Dip
ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল রাজবাড়ী জেলা, যার অবস্থান বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে। বর্তমান রাজবাড়ী জেলা পূর্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত ছিল। এটি পর্যায়ক্রমে ফরিদপুর, রাজশাহী, নাটোর, যশোর ও সবশেষে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হয়। শুধু যে জেলাটি অন্যান্য জেলার অন্তর্গত ছিল তা নয়, এ জেলার উপজেলাগুলোও বিভিন্ন জেলার সাথে যুক্ত ছিল। ১৯৮৪ সালে রাজবাড়ী জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং ৫ টি উপজেলা ও ৩ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয় রাজবাড়ী জেলা।
রাজবাড়ী জেলা যে কোনো রাজার বাড়ীর নামানুসারেই নামকরণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কবে ও কখন থেকে, আর কোন রাজার নামানুসারেই বা রাজবাড়ী নামটি এসেছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলার রেল ভ্রমণ বই (এল.এন. মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকায় সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন।
তখন এ অঞ্চলে পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমনের জন্যে তিনি সংগ্রাম শাহকে নাওয়ারা প্রধান করে পাঠান। সংগ্রাম শাহ্ ও তার পরিবার বানিবহতে লালগোলা নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করেন এবং এই লালগোলা দুর্গেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রাজবাড়ী শহরের কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বর্তমানে লালগোলা গ্রাম নামে পরিচিত। রাজা সংগ্রাম শাহের রাজদরবার বা রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অফিস বর্তমান রাজবাড়ী এলাকাকে কাগজে কলমে রাজবাড়ী লিখতেন (লোকমুখে প্রচলিত)।
আবার ঐতিহাসিক আনন্দনাথ রায় ফরিদপুরের ইতিহাস বইয়ে বানিবহের বর্ণনায় লিখেছেন- নাওয়ারা চৌধুরীগণ পাঁচথুপি থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বানিবহে এসে বসবাস শুরু করেন। বানিবহ তখন ছিল জনাকীর্ণ স্থান। নাওয়ারা চৌধুরীগণের বাড়ি স্বদেশীগণের নিকট রাজবাড়ী নামে অভিহিত ছিল। এছাড়াও রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়েছে বলেও জানা যায়।
ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে রাজবাড়ী জেলার রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। ফকীর সন্ন্যাস আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, মুজাহিদ আন্দোলন, ওহাবী আন্দোলন, ফরায়েজী আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহসহ বৃটিশ বিরোধী বহু আন্দোলন, কমিউনিস্ট আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, রেলশ্রমিক আন্দোলন এবং সর্বোপরি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে রাজবাড়ীর ভূমিকা উল্লেখ করার মত।
সাংস্কৃতিক অঙ্গণে উপ-মহাদেশ খ্যাত জলতরঙ্গ বাদক বামন দাস গুহের জন্মস্থান এই রাজবাড়ী। বিশ্বখ্যাত শিল্পী রশিদ চৌধুরীর জন্ম দিয়েছে এই জেলা। অমর কথা সাহিত্যিক বিষাদসিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন এর সমাধিও এ জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদীতে ছায়া সুনিবিড় সুশীতল পরিবেশে অবস্থিত। এছাড়া বহু কীর্তিমান রাজনীতিবিদ ও আমলার পূণ্য জন্মভূমি এই রাজবাড়ী।
ক্রীড়াঙ্গণেও রয়েছে এ জেলার গৌরবময় অতীত। বর্তমানে এ জেলার ছেলেমেয়েরা বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সাঁতার, এ্যাথলেটিকস, ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট প্রভৃতি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে বিজয়ী হয়ে জেলার সম্মান বৃদ্ধি করেছে। সাঁতারে রাজবাড়ীর মেয়েরা জাতীয় পরিমন্ডল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে।
রাজবাড়ী জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর তবে এখানে বেশ কিছু ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে উঠেছে। যদিও এসব প্রতিষ্ঠান জেলার উন্নয়নে তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই জেলার মানুষ কৃষি নির্ভর হলেও ব্যবসা, চাকরি ও দিনমজুরই এদের অন্যতম পেশা।
এই জেলার বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক স্থান রয়েছে। এসব স্থানগুলো হলো- মেইন স্ট্রিট, ধুঞ্চি গোদার বাজার, দাদশী মাজার শরীফ, নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির, রথখোলা সানমঞ্চ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র, চাঁদ সওদাগরের ঢিবি, গোয়ালন্দ ঘাট, রাজবাড়ি সরকারি কলেজ, শাহ পাহলোয়ানের মাজার, জামাই পাগলের মাজার, সমাধিনগর মঠ, নীলকুঠি, দৌলতদিয়া ঘাট, কল্যাণদিঘি।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.