কুমিল্লা জেলায় বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে ময়নামতি জাদুঘর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকষণীয় স্থান। এ জাদুঘরটি এখন দেশি-বিদেশি গবেষকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ময়নামতি জাদুঘরটি শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দেখা যায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম।
ময়নামতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। কুমিল্লার শ্রীভবদের মহাবিহার, শালবন বিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দ বিহার, রানীর বাংলা ও ভোজ রাজার বাড়ি বিহার খননকালে অনেক মুল্যবানপ্রত্নসামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়। এসব পুরাবস্তু সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়।
জাদুঘরের মূলভবনে গুরুত্বপূর্ণ পুরাবস্তু প্রদর্শনের জন্য স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৭০-৭১ সালে এর দক্ষিণ পাশ বর্ধিত করায় ভবনটি ইংরেজী ‘টি’র আকার ধারণ করে। পুরো জাদুঘর ভবনে মোট ৪২টি আধার রয়েছে। যাতে পুরাবস্তু সমূহ প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরের প্রবেশ পথের বাম দিকে থেকে ১নং প্রদর্শনী আধার দিয়ে প্রদর্শনী আরম্ভ করে ক্রমানুসারে চারদিক ঘুরে ঘুরে প্রবেশ দ্বারের ডান দিকে ৪২নং আধারে প্রদর্শনী শেষ হয়েছে।
প্রদর্শনী আধারগুলোতে প্রত্মতাত্ত্বিক স্থান খননের উম্মোচিত স্থাপত্যসমৃদ্ধ ধ্বংসাবশেষের ভূমি-নকশা, ধাতু লিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মৃন্ময় মুদ্রক-মুদ্রিকা, পোড়া মাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক, পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি পাতিল প্রদর্শিত হচ্ছে।
এছাড়া আধারের ফাঁকে ফাঁকে মেঝের উপর জাদুঘর ভবনের বিভিন্নস্থানে কিছু পাথর এবং ব্রোঞ্জ মূর্তিও প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এসব মূর্তির কয়েকটি প্রাচীন সমতটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত।
জাদুঘরে প্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য পাথর ও ব্রোঞ্জমূর্তি হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের পাথরের দন্ডায়মান লোকোত্তর বুদ্ধ মূর্তি, ত্রি বিক্রম বিষ্ণুমূর্তি, তারা মূর্তি, মারীছী মূর্তি, মঞ্জুরের মূর্তি, পার্বতী মূর্তি, হরগৌরীমূর্তি, নন্দী মূর্তি, মহিষমর্দিনী মূর্তি, মনসা মূর্তি, গনেশ মূর্তি, সূর্যমূর্তি, হেরুক মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের বজ্রসত্ত্ব মূর্তি।
এছাড়াও ব্রোঞ্জের ছোট-বড় আরও মূর্তি রয়েছে। এ জাদুঘরে রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরী বিশালাকায় একটি ঘন্টা। যার ওজন ৫শ’ কেজি। এর ব্যাস ০ দশমিক ৮৪ মিটার এর উপরের বেড়িসহ উচ্চতা ০ দশমিক ৭৪ মিটার।
এ জাদুঘরের আধারে সুরক্ষিত রয়েছে ময়নামতিতে পাওয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা। পোড়ামাটির ফলক। ব্রোঞ্জ ও তামার তৈরী সামগ্রী। লোহার তৈরী সামগ্রী। মাটির তৈরী বিভিন্ন প্রকারের খেলনা। কাঠের কাজের নিদর্শন। তুলট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডুলিপি। বিভিন্ন নমুনার মৃৎপাত্র ইত্যাদি।
টিকেট প্রাপ্তিস্থান:
জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার। এখান থেকে টিকেট নিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করতে হবে। তবে পাঁচ বছরের কম কোনো বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারণ করা আছে। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থী এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য একটু বেশি।
জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি:
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। মধ্যাহ্ন বিরতি হলো দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রদর্শনের সময়। মধ্যহ্ন বিরতি ১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
প্রতি সপ্তাহে শনিবার ব্যতীত অপর ছয়দিন জাদুঘর খোলা থাকে। এছাড়া সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও সোমবার অর্ধ দিবস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। এ ছাড়া জাদুঘরটি সরকারের অন্যান্য নির্বাহী আদেশে ঘোষিত সব ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার সায়েদাবাদ ও কমলাপুর হতে বেশ কয়েকটি ভালোমানের বাস পাওয়া যায়। কুমিল্লা পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এ ছাড়া কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনেও আসা সহজ। ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.