চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় করলডেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থিত হিন্দু তীর্থভূমি মেধস মুনির আশ্রম। মূলত এটি বাঙালি হিন্দুদের কাছে একটি জনপ্রিয় তীর্থ স্থান।
মার্কেন্ড পুরান, শ্রীশ্রীচণ্ডী পূরণে উল্লেখ আছে, এই আশ্রম ঋষি মেধসের। মার্কেন্ড পুরান অনুযায়ী দেবী দুর্গা মর্তলোকে সর্ব প্রথম এই ঋষি মেধসের আশ্রমে অবতীর্ণ হন। শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে কথিত রয়েছে, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি মহর্ষি মার্কেন্ডের কাছেই প্রথম দেবীমাহাত্ম্যম্ এর পাঠ নেন এবং এই স্থানে প্রথম দুর্গাপূজা করেন।
মেধস মুনি রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধিকে প্রথম দুর্গোৎসবের পাঠ দিয়েছিলেন। রাজা ও বৈশ্য নিজেদের খারাপ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে চট্টগ্রামের মেধসের এই আশ্রমে মাটি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করেন আর সেই থেকে মর্তলোকে প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত, এখানে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে।
এটি বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালিদের অন্যতম বৃহৎ তীর্থস্থান। ধারণা করা হয়, এই জায়গা থেকেই সমগ্র বঙ্গদেশে বাঙালিদের মধ্যে এবং পরবর্তীতে সমগ্র ভারতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গাপূজা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকহানাদার বাহিনী এই আশ্রম ও আশ্রম সংলগ্ন মন্দির ধ্বংস করে দেয়। যুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে স্থানীয় হিন্দুদের সহযোগিতায় এই মন্দির ও আশ্রম আবার পুনঃনির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে আশ্রমে চণ্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দিরসহ ১০টি মন্দির রয়েছে। সাথে রয়েছে সীতার পুকুর।আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার, অর্থাৎ ১৪০টি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলে মেধস মুনির মন্দির চোখে পড়বে। আর এই মন্দিরের পরই দেবী চণ্ডীর মূল মন্দির। সীতার পুকুরের পেছন দিকে একটি ঝর্ণা চোখে পড়বে। মন্দিরের পেছনে সাধু সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে দোতলা ভবন। প্রায় ৬৮ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই মন্দির।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে যে কোনো পরিবহণে করে আগে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবে। তারপর বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কানুনগোপাড়া পর্যন্ত লোকাল বাসে গিয়ে সেখান থেকে বাকিটা পথ সিএনজি করে চলে যেতে পারেন মেধস মুনির আশ্রম। আবার চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে সরাসরি গাড়ি ঠিক করেও যেতে পারেন।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.