কর্মব্যস্ত শহর ঢাকা। এখানে ব্যস্ত জীবন থেকে একটু বিরতি নিয়ে প্রশান্তি ভরে দম নেয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই বললেই চলে। ইট, কাঠ, কংক্রিটের এই শহরে এক টুকরো সবুজের দেখা মেলা ভার। তাই সাপ্তাহিক ছুটিতে অথবা যেকোনো সরকারি ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে। এমন কোনো জায়গা, যেখানে সবুজে ঘেরা প্রকৃতিতে একটু স্বস্তির নিশ্বাঃস নেয়া যাবে।
এমনই একটি জায়গা ‘মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট’। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্ব। কিছুক্ষণের জন্য ব্যস্ততার কথা ভুলে নিশ্চিন্তে যেতে পারবেন সবুজের মাঝে। পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টে। বিনোদনের নানা আয়োজনে ঠাসা এই রিসোর্ট।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম ও কটেজ, বাহারি মুখরোচক দেশি ও চাইনিজ খাবার, সুইমিং পুল, স্পিড বোটে ভ্রমণ, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠসহ এখানে পাবেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ। রয়েছে হাইওয়ে ক্যাফে রেস্টুরেন্ট, গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স লাউঞ্জ, স্যুভেনির শপ ও বিশাল পার্কিং এর সুবিধাও।
মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজ। পছন্দমত যে কোনো প্যাকেজ আপনি ঠিক করতে পারেন।
• কর্পোরেট পিকনিক প্যাকেজে রিসোর্টের পিকনিক জোন রিজার্ভ করা থাকবে। এর সঙ্গে থাকবে একটি এসি ও একটি নন এসি রুম। আপনি চাইলে আরো রুম রিজার্ভ করতে পারবেন। ছুটির দিনে যা রেট থাকে, অন্য যে কোনো সময় এই প্যাকেজের জন্য আপনাকে তার চেয়ে কম খরচ করতে হবে। এছাড়া প্রায়ই রিসোর্টের পক্ষ থেকে ডিসকাউন্ট অফার দেয়া হয়।
• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও আছে বিশেষ প্যাকেজ। কর্পোরেট প্যাকেজে যা যা সুবিধা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পিকনিকে গেলে রিসোর্টটিতে একই ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া ছুটির দিন ছাড়া গেলে ৪০% ডিসকাউন্টও থাকছে এই প্যাকেজে।
• আপনি যদি শুধু পরিবার নিয়ে বনভোজন করতে এই রিসোর্টে যেতে চান তবে আপনাকে আগে থেকে রিজার্ভেশন দিতে হবে না। পরিবারসহ সরাসরি চলে যেতে পারেন সেখানে। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ১৫০ টাকা খরচ পড়বে। আপনি চাইলে খাবার নিয়ে আসতে পারবেন অথবা রিসোর্টে গিয়েও রান্না করতে পারবেন। আর মেঘনা ভিলেজে হানিমুন প্যাকেজও রয়েছে।
• আরো একটি স্পেশাল প্যাকেজ রয়েছে এই রিসোর্টে। যা ‘বারবিকিউ ইভিনিং এট পুল সাইট’ নামে পরিচিত। যেখানে সুইমিং পুল জোনে আপনাকে গ্রিলড মুরগিসহ নানা খাবার পরিবেশন করা হবে। কমপক্ষে ১০ জনের জন্য এই প্যাকেজটি আপনি নিতে পারবেন এখানে। চাইলে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিজনে ১০০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে।
• এছাড়া রিসোর্টের পুকুরে মাছ ধরার সুবিধাও রয়েছে। পুকুরে রুই, কাতলা, তেলাপিয়াসহ নানা প্রজাতির ছোট ছোট মাছ রয়েছে। বড় মাছ ধরলে কেজিপ্রতি পৃথক দাম ও ছোট মাছের ক্ষেত্রে পিস প্রতি মূল্য নির্ধারণ করা আছে।
রুম:
সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা এই রিসোর্টে রয়েছে গার্ডেন ও লেকভিউসহ এসি/নন এসির সিঙ্গেল রুম, ডিলাক্স কাপল রুম, ফ্যামিলি স্যুট ও হানিমুন স্যুট। ওয়ান স্টার স্ট্যান্ডার্ডের এই রুমগুলো ৪ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি পারবেন। এছাড়া কাপলদের জন্য মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ট্যারিফের রুম। সেগুলো হলো: সুপিরিয়র হানিমুন এসি স্যুট, সুপিরিয়র কাপল এসি রুম, সুপিরিয়র কাপল এসি কটেজ, প্রিমিয়ার সিঙ্গেল বেড কাপল এসি স্যুট, প্রিমিয়ার সিঙ্গেল ও টুইন বেড কাপল এসি কটেজ ও সিঙ্গেল বেড নন এসি কাপল স্যুট।
আপনি চাইলে শুধু দিনের জন্য অথবা ২৪ ঘণ্টার জন্য রুম ভাড়া নিতে পারবেন। দিনে থাকতে চাইলে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে আপনি যে কোনো স্যুট বা রুম নিতে পারবেন। এর সঙ্গে আপনি পাবেন লাঞ্চ ও সুইমিং সুবিধা। আর যদি শুধু রাতে থাকতে চান তাহলে আপনার ৪ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে আপনি ডিনার, ব্রেকফাস্ট ও সুইমিং পাবে ফ্রি। অথবা আপনি ২৪ ঘণ্টার জন্য এই রুমগুলো ৫ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকায় পাবেন। যার সঙ্গে আপনি পাবেন লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্ট ও সুইমিং সুবিধা।
মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টে আপনি বিভিন্ন উৎসবে নানা অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজনও করতে পারবেন। যেমন: নববর্ষে বৈশাখী মেলা, পৌষ মেলা, ঈদ উপলক্ষে মেলা। এখানে আপনি কুমিল্লার বিখ্যাত খাঁটি রসমালাই ও দই এর স্বাদও নিতে পারবেন। যা এখানকার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয়।
রিসোর্টে চেক ইন ও চেক আউটের সময়সীমা:
ডে-লং চেক-ইন: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা,
নাইট-লং চেক-ইন: সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা,
২৪ ঘণ্টার চেক-ইন: সকাল ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা।
রিভার রিসোর্ট বোট ক্লাব:
এখানে আপনি স্পিড বোটে কাজলী নদীতে ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া ফ্লাইং বোট রাইডের সুযোগও রয়েছে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে যেতে হবে কাঁচপুর ব্রিজ। সেখান থেকে সোনারগাঁ হয়ে মেঘনা ব্রিজ। মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে বালুকান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাম দিকের পথ ধরে ১ কিলোমিটার এগুলেই পৌঁছে যাবেন মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট।
নিসজ্ব গাড়ি অথবা পাবলিক বাসে করে খুব সহজেই যাওয়া যায় এখানে। বাসে গেলে কুমিল্লা বা দাউদকান্দি যায় এমন কোনো বাসে যেতে হবে দাউদকান্দির বালুয়াকান্দি বাস স্টপেজে। সেখান থেকে রিসোর্টে। এছাড়া ঢাকার যেকোনো এলাকা থেকে রিসোর্টের নিজস্ব গাড়িতে করেও সেখানে যেতে পারবেন। তবে এজন্য আপনাকে আগেই বুক করতে হবে। রিসোর্টে কল করলেই আপানার বাসায় পৌঁছে যাবে মাইক্রোবাস।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.