বঙ্গবন্ধু দ্বীপ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার দুবলার চর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থিত। এটি পর্যটনের নতুন একটি আকর্ষণীয় স্থান। এই দ্বীপটি পুটনির দ্বীপ নামেও পরিচিত।
এটিকে বঙ্গবন্ধু চর, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড নামেও ডাকা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নতুন এই দ্বীপটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ। ১৯৯২ সালে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নতুন জেগে ওঠা এই চরের দেখা প্রথম পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একনিষ্ঠ এক ভক্ত মালেক ফরাজী। তিনি ছিলেন একজন মৎস্য শিকারী। তখন তিনি জনমানবহীন এ দ্বীপের নাম দেন ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’ এবং সেখানে এই নামের একটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আসেন।
১৯৭৬ সাল থেকেই স্যাটেলাইট ইমেজে দ্বীপটির অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। পরে দ্বীপটি মাঝেমধ্যে জেগে ওঠে আবার ডুবে যায়। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপের আকার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে থাকে। তারপর থেকে এটি না ডুবে ক্রমেই বড় হচ্ছে। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক যায় দ্বীপটিতে। সেখানে তারা অবস্থান করে দ্বীপটির অভ্যন্তরীণ মৃত্তিকা, ডিসিপি জরিপ ও ভিজিবিলিটি অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান চালান।
দ্বীপটির চারদিকে গড়ে উঠেছে প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রশস্ত সমুদ্রসৈকত। এই দ্বীপটির পেছন দিকে রয়েছে নয়নাভিরাম ছোট ছোট বালির ঢিবি। সবচেয়ে পেছনে রয়েছে মাত্র এক দশকেরও কম সময়ে গড়ে ওঠা সবুজ, শ্যামল বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।
জীববৈচিত্র্যের আঙ্গিকেও দ্বীপটির উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্ভার বেশ খানিকটা বৈচিত্র্যময়। অজস্র লাল কাঁকড়ার মনোরম ছোটাছুটি, স্বচ্ছ পানি, প্রশস্ত বালুকাভূমিসহ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দ্বীপটিকে দিয়েছে নান্দনিকতা। প্রাথমিকভাবে দ্বীপটিতে চার প্রজাতির কাঁকড়া, ১৬ প্রজাতির মোলাস্কা, আট প্রজাতির প্লাংকটন ও দুই প্রজাতির বার্ণাকল পাওয়া গেছে। এছাড়া দ্বীপটিতে এক প্রজাতির এসিডিয়ানের সন্ধান মিলেছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। এছাড়া স্থলজ প্রাণিকুলের মধ্যে ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকা-মাকড় পাওয়া যায়
সুন্দরবনের কাছে নতুনরূপে আবিষ্কৃত ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’ পর্যটন বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আশেপাশের পরিচিত পর্যটন স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপটি বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য স্থান।
যেভাবে যাবেন:
সড়ক পথ:
ঢাকা থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত অনেকগুলো গাড়ি সরসারি যাতায়াত করে। বাগেরহাট থেকে প্রথমে রূপসাগামী বাসে করে কাটাখালি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে মংলাগামী বাস পাওয়া যাবে। মংলা পৌঁছে সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে চলে যেতে পারবেন বঙ্গবন্ধু দ্বীপে।
মেঘনা, ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা নামের বাসগুলো প্রতিদিন ঢাকার সায়দাবাদ থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। এছাড়া গাবতলী থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ ও ইগল পরিবহনের বেশ কিছু বাস বাগেরহাট যাওয়া আসা করে।
রেল পথ:
রেল পথে সরাসরি মংলা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বিমান বন্দর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ যমুনা ব্রিজ হয়ে পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা যশোর হয়ে খুলনা যাওয়া যায়। এরপর সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড অথবা রূপসা নদী পার হয়ে রূপসা বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি মংলা যাওয়া যায়।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.