ফরিদপুরের প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামো মথুরাপুর দেউল - Hosted By Ali Faisal Dip
প্রাচীনকাল থেকেই ফরিদপুর জেলার অনেক কীর্তিময় গৌরব-গাঁথা রয়েছে। এই জেলায় দেখার মতো বেশকিছু নিদর্শন আছে। তারমধ্যে মথুরাপুর দেউল অন্যতম। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। তবে অনেকের অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা।
কথিত আছে, সংগ্রাম সিং নামে বাংলার এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেছিলেন৷ খৃষ্টপূর্ব ১৬৩৬ সালে ভূষণার বিখ্যাত জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর তিনি এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান। এরপর তৎকালীন শাসকদের ছত্রছায়ায় তিনি বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন৷ এলাকার নিয়ম অনুযায়ী তিনি কাপাস্তি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন এবং মথুরাপুর বসবাস শুরু করেন৷
আরেকটি সূত্রমতে, সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসেবে এই দেউল নির্মাণ করেছিলেন৷ সে অনুযায়ী, মথুরাপুর দেউল একটি বিজয়স্তম্ভ৷ তবে এই সূত্রটির সত্যতা নিরুপন সম্ভব হয়নি৷
এই দেউলটি বারোকোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২১.২ মিটার উঁচূ। এর ভিতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এটির গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে খুব একটা ভুল হবে না৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনাগুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউলটিই সম্ভবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল৷ এই দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ রয়েছে; যার একটি দক্ষিণ মুখী, আর অপরটি পশ্চিম মুখী৷
বারোটি কোণ থাকায় উপর থেকে এটিকে তারার মত দেখা যায়৷ স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ৷ দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে আসলে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাঙ্কণ করা রয়েছে৷ রামায়ণ কৃষ্ণলীলার মতো হিন্দু পৌরাণিক কাহীনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা, পবন পুত্র বীর এবং যুদ্ধচিত্রও এই দেওলের গায়ে খচিত আছে৷ আর এর প্রতিটি কোনের মাঝখানে কৃত্তিমূখা স্থাপন করা রয়েছে৷
এই দেউলটির কোথাও কোনো লেখা পাওয়া যায়নি৷ তবে বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে চলেছে৷ ফরিদপুর ভ্রমণে গেলে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি দেখতে ভুলবেন না যেন।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার গাবতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশ কিছু এসি ও নন এসি বাস সরাসরি ফরিদপুর যাওয়া-আসা করে। আবার কিছু বাস নদীর এপার পর্যন্ত যাওয়া-আসা করে; সে ক্ষেত্রে নদীর ওপারে গিয়ে বাস বদলাতে হয়।
ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে মধুখালীতে যাওয়া যায়। এছাড়া মাগুরা এবং ঝিনাইদহ জেলায় যাতায়াতকারী বাসেও মধুখালী বাজারে যাওয়া যায়। সেখান থেকে রিকশায় করে খুব সহজেই দেউলে পৌছানো যায়। দেউলের আশেপাশে রিকশা পেতে সমস্যা হতে পারে, তাই মধুখালী বাজার থেকে যাওয়া আসার জন্য রিকশা ভাড়া করাই ভালো।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.