পুঁইশাকের ডালনা বাঙালীর খুবই প্রিয় একটি খাবার। গ্রাম হোক, কিংবা শহর; সব জায়গার মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে এই দেশীয় খাবরটি। যারা দিনের যে কোনো এক বেলা পাতে সবজি চান, তাদের জন্য এটি পারফেক্ট একটি রেসিপি। এতে পুঁইশাকের সাথে ডাল, আলু এবং মিষ্টি কুমড়া দেয়ায় পুষ্টিও পাওয়া যায় অনেক।
‘বাংলা শব্দকোষ’ অনুযায়ী, ডালনা হলো দলিত করে রান্না করা তরকারি। এক সময় তরকারির আলুকে নরম করে, ডলে একটু আঠা আঠা বানিয়ে ডালনা রান্না করা হত। আলুকে দলাই করা হত বলে দালনা বা ডালনা। দাদী-নানীরা বলতেন ডালের মত পাতলা নয় বলে একে বলা হত ‘ডাল না’; আর এর থেকেই এক সময় সবার মুখে মুখে রান্নাটি হয়ে যায় ‘ডালনা’।
নামকরণের ইতিহাস যাই হোক, পুঁইশাকের ডালনা কিন্তু খুবই লোভনীয় একটি খাবার। ভ্রমণবন্ধুর দেশি খাবার পাঠকদের জন্য কুমিল্লা থেকে রেসিপিটি পাঠিয়েছেন ফৌজিয়া রিটা।
পুইশাকের ডালনা রান্নার উপকরণ:
পুইশাক (১ আঁটি)
মসুর ডাল (১ কাপ)
মিষ্টি কুমড়া (১ ফালি)
আলু (বড় ১টি)
পেঁয়াজ (বড় ১টি)
রসুন (৬-৭ কোয়া)
শুকনা মরিচ (২টি)
লবণ (পরিমাণমত)
হলুদ গুঁড়া (১/২ চা চামচ)
মরিচ গুঁড়া (১/২ চা চামচ)
ধনিয়ার গুঁড়া (১/২ চা চামচ)
কাঁচা মরিচ (৬-৭টি)
আস্তো জিরা (১/৪ চা চামচ)
পাঁচফোরন (১/৪ চা চামচ)
তেল (পরিমাণমত)
লবণ (পরিমাণমত)
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ রসুন দিতে হবে। পেঁয়াজ রসুন নরম করার জন্য সামান্য লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে হলুদ, মরিচ আর ধনিয়ার গুঁড়া দিতে হবে। আরো কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে মসুরের ডাল দিয়ে দিতে হবে। তারপর গরম পানি দিয়ে ডালটা সিদ্ধ করে নিতে হবে ৪০ ভাগ।
এর মধ্যে ছোট ছোট করে মিষ্ট কুমড়া আর আলু কেটে নিন। আলুটা দিলেও হয়, না দিলেও হয়। ডালটা যখন একটু সিদ্ধ হয়ে আসবে তখন দিয়ে দিয়ে দিতে হবে আলু আর কুমড়ার টুকরো গুলো। যদি ডালের পানি কিছুটা শুকিয়ে আসে তাহলে আবার একটু গরম পানি দিয়ে আরেকটু সিদ্ধ করে নিতে হবে।
আলু আর কুমড়া যখন সিদ্ধ হয়ে আসবে তখনই দিয়ে দিতে হবে পুঁইশাক। এরপর একটু নাড়াচাড়া করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সবগুলো সিদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ দিয়ে ৫ মিনিট দমে রেখে দিন। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার পুইশাকের ডালনা।
তবে একটু বাড়তি স্বাদের জন্য আরেক কাজ করতে পারেন। অন্য একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল দিয়ে এরমধ্যে জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ আর কিছুটা পাঁচফোড়ন দিয়ে সবগুলো যখন গাঢ় বাদামী হয়ে গেলে শাকে ফোড়ন দিয়ে দিন। খুবই অল্প আঁচে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সাথে কিংবা রুটি দিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে পুঁইশাকের ডালনা।
জেনে নিন:
অনেক গুণে গুণান্বিত পুঁইশাক। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আঁশজাতীয় শাক (যেমন: পুঁই বা মিষ্টিকুমড়ার শাক) খায় তাদের পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেহের বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে বাইরে যেতে সাহায্য করে।
এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’; যা ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, বৃদ্ধি ও বর্ধনে সাহায্য করে। চোখের জন্যও উপকারী এই শাক। আর যারা চুল নিয়ে সমস্যায় আছেন তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন পুঁইশাক। কারণ এই শাক চুলকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা, তাদের এই শাক না খাওয়ায় ভালো।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.