দিলপাশার বিলের সৌন্দর্য বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এখানে সব কিছুতেই আপনি সৌন্দর্য খুঁজে পাবেন। বিলের পরিবেশ, রাস্তাঘাট, বিলে ভেসে যাওয়া মাছ ধরার নৌকা, ধানবাহী নৌকা, কিংবা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের পিকনিকের নৌকা, কখনো কখনো দূরে নৌকা থেকে ভেসে আসা গান।
যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর আকাশ। পানিতে ভেসে বেড়ায় ছোট-বড় অনেক নৌকা আর আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা সাদা মেঘ। কখনো কখনো পাখি উড়ে যায় দূর বা কাছ দিয়ে। বিলের পানিতে ছোট ছোট স্রোত সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠে। বিলের শীতল নরম বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এই সব কিছুর মাঝে থেকে চোখ এবং মাথা থেকে যেন হাজার বছরের ক্লান্তি ঝরে পড়ে।
বিলের দুই পাশের রাস্তায় বড় বড় সবুজ গাছের সারি, গাছের পাতার ফাঁকে বিস্তৃত সাদা মেঘে ভাসা নীল আকাশ, বিলের মাঝে জেগে ওঠা চরে মহিষের চলাফেরা, কৃষকের ধান কাটা, বাড়ির মেয়ে ও মহিলাদের বিলের পানিতে কাপড় কাঁচা সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে। মনে হবে বিলের পাশে এই গাছ তলায় বসে অনন্তকাল কাটিয়ে দেই।
দিলপাশার ইউনিয়ন পাবনা জেলার চলন বিল বিধৌত একটি ইউনিয়ন। এর পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়ন, উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলার উধুনিয়া ইউনিয়ন, দক্ষিণে পাবনা জেলার বিএল বাড়ী ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন।
ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে এটি অত্যান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। তবে এলাকার স্থানীয় রাস্তাগুলো বেশ ভালো। সারাবছর স্থানীয় মানুষ ছাড়া তেমন কারো যাতায়াত হয়না। বর্ষাকালে এখানে প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড় জমে। প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকাল প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে এখানে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড় একটু বেশি থাকে। অনেকে আবার নৌকায় করে বেড়াতে আসে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
দিলপাশা পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় অবস্থিত একটি বিল, যা চলন বিলের একটি অংশ। অসাধারণ সুন্দর পরিবেশ। রেল লাইন চলন বিলের মধ্য দিয়ে গেছে। বর্ষাকালে বর্ষার পানিতে রেললাইন ডুবে যায়। আর সেই ডুবে যাওয়া রেল লাইনের উপর দিয়েই যায় রেল। রেলের চাকার ধাক্কায় লাইনের উপরে থাকা পানিগুলো দু’পাশে ছিটকে সরে যায় দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন পানির মধ্যে দিয়েই রেল গাড়ি যাচ্ছে। অসাধারণ সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়।
শরনগর এবং লাহিড়ী মোহনপুরের মধ্যে দিলপাশার রেলওয়ে স্টেশন আছে, সেখানে শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন স্টপ আছে। ব্রিটিশরা এখানে এই বিলের মাঝে রেলস্টেশন তৈরি করে। ব্রিটিশরা এই দিলপাশা বিল থেকে কলকাতায় মাছ নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি এটি করেছিল। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে এখান থেকে কলকাতায় মাছ পাঠানো হতো। একবার এখান থেকে প্রচুর মাছ কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল।
বর্ষা মৌসুমে শুধু মাছ পাঠানো নয়, সারাবছর মানুষের চলাফেরা এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হতো এই দিলপাশার রেল স্টেশন। আট থেকে দশটি ট্রেন সারাদিন চলাচল করত। যখন এত যানবাহন ছিলনা তখন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া ও তাড়াশ, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এই এলাকার মানুষদের চলাফেরার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই স্টেশন।
বর্তমানে ইন্টারসিটি রেল সার্ভিস চালু হওয়ার কারণে এই এলাকায় এবং স্টেশন অবহেলায় পড়ে আছে। এখানে লোকাল রেলগাড়ি ছাড়া আর কোন রেল থামেনা। এই এলাকার মানুষদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন হলো বর্ষার সময় নৌকা।
যেভাবে যাবেন:
পাবনা শহর থেকে খুব সহজে সিএনজির মাধ্যমে চাটমোহর হয়ে ভাঙ্গুড়ার এই দিলপাশা ইউনিয়নে পৌঁছাতে পারবেন। পাবনা থেকে যেতে এক ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময় লাগবে। আপনি চাইলে আপনার নিজস্ব বাইক বা প্রাইভেট কার নিয়ে যেতে পারবেন।
রাস্তাঘাটের অবস্থা বেশ ভালো। আঁকাবাঁকা রাস্তা, দু’পাশে বড় বড় গাছ, একদম সবুজ পরিবেশ। আপনার গন্তব্যের দিলপাশা বিল যেমন অসম্ভব সুন্দর, ঠিক তেমনি সেখানে পৌঁছানোর রাস্তা এবং রাস্তার দু’পাশের পরিবেশ সুন্দর। যেতে যেতে চাইলে দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে চা খেতে পারবেন। কিংবা গাড়ি থেকে নেমে সুন্দর প্রকৃতিতে ছবিও তুলতে পারবেন।
তবে বিল দেখে ফিরে আসার সময় চাটমোহরের বিখ্যাত রসমালাই না খেয়ে আসবেন না। এটা না খেলে বিশাল বড় মিস হয়ে যাবে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.