বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ হলেও এখানে রয়েছে খাবারের নানা বৈচিত্র্য। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে ঐতিহবাহী ও জনপ্রিয় অনেক খাবার। রান্না পদ্ধতি, রীতি-নীতি, খাবার পরিবেশন, খাদ্যের নামকরণ, স্বাদসহ অনেক বিষয়েই রয়েছে ভিন্নতা। এসব কারণেই খাবারগুলো অঞ্চল ছাড়িয়ে পুরো দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে দেশি খাবার।
আজ পাবনা জেলার ঐতিহবাহী তিনটি খাবার সম্পর্কে জানবো। জেলার ঐতিহ্যবাহী এসব খাবারগুলো খুব সহজেই তৈরি করা যায়। পাবনার ঐতিহ্যবাহী তিনটি খাবার হলো: চিংড়ি দিয়ে কলার মোচা ঘন্ট, লাউ-বরইয়ের খাট্টা বা টক এবং বেগুনের খাট্টা বা টক।
চিংড়ি দিয়ে কলার মোচা ঘন্ট
সহজলভ্যতা এবং স্বাদের কারণেই সব শ্রেণীর মানুষের কাছে খুবই পছন্দের খাবার মাছ। তার মধ্যে চিংড়ি অন্যতম। চিংড়ি মাছ পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে। আর কাটার ভয়ে যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন না, তাদের কাছে তো চিংড়ির জুড়ি নেই। কারণ এতে কোনো কাটা নেই। আর চিংড়ি দিয়ে কলার মোচা ঘন্ট যে কি সুস্বাদু, সেটি আসলে বলে বোঝানো যাবে না। আপনি একবার খেলে আপনার মুখে এর স্বাদ লেগে থাকবে। পাবনার স্থানীয় খাবার হলেও এই খাবারটি খাওয়ার জন্য পাবনা যাবার কোনো দরকার নেই। আপনি নিজের বাড়িতেও এই খাবারটি রান্না করে খেতে পারেন আর এটি রান্না করাও খুব সহজ।
উপকরণ: কলার মোচা ২টি, চিংড়ি মাছ ১ কাপ, আলু ২টি, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ২ চা চামচ, জিরার গুঁড়া ১ চা চামচ, আস্ত জিরা ১ চা চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ, তেল আধা কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৪-৫টি, নারকেল দুধ আধা কাপ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: কলার মোচা বেছে, কেটে ধুয়ে লবণপানিতে ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর হলুদগুঁড়া আর লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে বেটে নিতে হবে। আলু সেদ্ধ করে চটকে নিন। চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে শুকনা মরিচ ও জিরার ফোড়ন দিয়ে কলার মোচা ঢেলে অন্য মসলা, আলু ও চিংড়ি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। এরপর এতে নারকেল দুধ, ঘি ও গরমমসলার গুঁড়া দিয়ে আরো ১০ মিনিট রান্না করুন। তৈরি হয়ে গেল চিংড়ি দিয়ে কলার মোচা ঘন্ট। এটি গরম গরম খেতেই কিন্তু বেশি মজা।
এবার জেনে নেয়া যাক লাউ-বরইয়ের খাট্টা বা টক রান্নার পদ্ধতি
উপকরণ: লাউ ২ কাপ, শুকনা বরই ২৫০ গ্রাম, তেঁতুল পরিমাণমতো, গুঁড় পরিমাণমতো, সরিষার তেল আধা কাপ, হলুদগুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া ১ চা চামচ, শুকনা মরিচ ৬টি, তেজপাতা ৪টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি ১ চা চামচ, আদাবাটা আধা চা চামচ ও পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ।
প্রণালি: লাউ ছোট করে কেটে ধুয়ে নিন। এবার সামন্য পানিতে লাউ, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, লবণ, তেজপাতা দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে নিন। একটি পাত্রে সরিষার তেল গরম করে এতে পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন দিয়ে হালকা নেড়ে সেদ্ধ লাউ দিয়ে দিন। এরপর এতে তেঁতুল, বরই, গুড় দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। নামানোর আগে ভাজা জিরার গুঁড়া ছড়িয়ে দিন।
বেগুনের খাট্টা বা টক রান্নার পদ্ধতি
উপকরণ: বড় বেগুন ১টি, তেঁতুল ১ টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য, হলুদগুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা চামচ, পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ, শুকনা মরিচ ৪টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি স্বাদমতো, পেঁয়াজকুচি ১ চা চামচ, রসুনকুচি ২ চা চামচ, টক দই ১ টেবিল চামচ ও সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: বেগুনের বোটার কাছ থেকে কেটে ৪ ভাগ করে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন বেগুন যেন পুরোটা না কেটে যায়। এবার হলুদ, মরিচ ও লবণ দিয়ে মেখে ডুবো তেলে বেগুন ভেজে নিতে হবে। প্যানে সরিষার তেল দিয়ে পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, শুকনা মরিচ ও পাঁচফোড়ন ভেজে সামান্য পানি ও বেগুন দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। নামানোর আগে অল্প একটু চিনি ছড়িয়ে দিতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল বেগুনের খাট্টা বা টক।
এছাড়া পাবনার শ্যামলের দই, আর প্যারাডাইসের প্যারাসন্দেশ (শীতকালে পাওয়া যায়) ও সকালের নাস্তায় লুচি সবজি বেশ জনপ্রিয়। পাবনা ভ্রমণে গেলে সকালে প্যারাডাইসের লুচি সবজি আর দুপুরে অনেক বছরের পুরনো বিরিয়ানি হাউজের বিরিয়ানি খেয়ে দেখতে পারেন।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.