জাতীয় উদ্যান হলো এমন স্বাভাবিক বা মনুষ্যনির্মিত বনাঞ্চল, যেখানে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি তাদের প্রজনন ও আবাস নিরাপদ রাখতে শিকারিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সাধারণত বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ পরিবেশ, তাদের স্বাভাবিক কিংবা বর্ধিত প্রজনন পরিবেশ, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক সংখ্যা এবং বৃক্ষরাজি কিংবা ঔষধি বৃক্ষরাজির নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকার কিংবা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়।
তেমনই একটি উদ্যান ‘নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান’। এটি বাংলাদেশের হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে অবস্থিত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।
বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চর মুরি এই চারটি দ্বীপের মোট ১৬,৩৫২.২৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে উদ্যানটি গঠিত। নিঝুম দ্বীপের জীববৈচিত্র্য বেশ সম্বৃদ্ধ। শীতকালে অসংখ্য পরিযায়ী জলচর ও পানিকাটা পাখি নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে আসে। এই উদ্যানটি বৈশ্বিক বিপদগ্রস্ত পাখি, দেশি গাঙচষার অন্যতম প্রধান বিচরণস্থল।
এছাড়া এই দ্বীপে রয়েছে প্রচুর চিত্রা হরিণ। নিঝুম দ্বীপের প্রধান বন্যপ্রাণী এই চিত্রা হরিণ। এখানে একর প্রতি চিত্রল হরিণের ঘনত্ব সুন্দরবনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বাঘের মতো কোনো মাংসাশী প্রাণী না থাকায় দ্রুতগতিতে এদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে নখরবিহীন উদবিড়াল, মেছো বাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে নিশি বক, দেশি কানিবক, গোবক, দেশি পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, কালোহাঁস, কোড়া, তিলা লালপা, তিলা সবুজপা ইত্যাদি। এই উদ্যান দেশি গাঙচষার অন্যতম প্রধান বিচরণস্থল। সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে দেশি গুঁইসাপ ও নানান জাতের সামুদ্রিক কচ্ছপ। সামুদ্রিক কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ প্রজননস্থল এই নিঝুম দ্বীপ। এখানকার বনভূমি মূলত প্যারাবন প্রকৃতির।
জানা যায়, ১৯৫০ সালের দিকে সমুদ্রবক্ষে জেগে ওঠে নিঝুম দ্বীপ। এই দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। কথিত আছে, ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন তার নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরবর্তীতে দ্বীপটি ‘নিঝুম দ্বীপ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।
১৯৭০ এর আগে এখানে কোনো জনবসতি ছিল না। পরে হাতিয়া, শাহবাজপুর, রামগতির নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দ্বীপটিতে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে ১৯৭৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। পরবর্তীতে হরিণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় এমভি ফারহান৩ অথবা ফারহান৪ লঞ্চে করে রওনা দিলে পরদিন সকাল ৬টায় হাতিয়া পৌঁছে যাবেন। হাতিয়া পৌঁছানোর পর সেখান থেকে মাছ ধরা লঞ্চে সোজা নিঝুম দ্বীপ অথবা প্রতি বাইকে দু’জন করে চলে যান ঘাটপার, সেখান থেকে নৌকায় করে নিঝুম দ্বীপ। এরপর আবার বাইকে করে যেতে হবে একদম আসল নিঝুম দ্বীপের নামারবাজার।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.