বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দমদম পীরের ঢিবি। এটি যশোর সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মনিরামপুর উপজেলার ভোজগাতি ইউনিয়নের দোনার গ্রামে অবস্থিত।
১৯৮৬ সালে এলাকার মানুষ ঢিবি সংলগ্ন এটি মাদ্রাসা স্থাপন করে। মাদ্রাসা নির্মাণকালে ঢিবি থেকে মাটি কাটার সময় ইটের তৈরি গাথুনী বেরিয়ে আসে। এরপরই দমদম পীরস্থানের পরিচিতি ক্রমশ বিস্তার লাভ করতে থাকে।
২০০৪-০৫ সালে সরকারিভাবে প্রথম এই ঢিবি খনন করা হয়। খননকালে ছাদ বিহীন ৮টি পূর্নাঙ্গ কক্ষ আবিষ্কৃত হয়। ২০০৬-০৭ সাল পর্যন্ত মোট কক্ষ পাওয়া যায় ১৮টি। এই সময় মন্দিরের নকশার মধ্যে পদ্মপাপড়ি খচিত ইট থেকে ধারণা করা হয় এটা জৈন মন্দির ছিল। যার স্থাপনাকাল ১০০ খৃষ্টপূর্বে।
এখানে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তারমধ্যে ছোট আকারের পাথরের তৈরী বুদ্ধমূর্তি, ছয়টি কক্ষ, পোড়ামাটির ফলক ও পদ্মফুল, ধাতব আংটি, হাড়ি, চুড়ি, কড়াই প্রভৃতি প্রধান। কক্ষগুলোর দেয়াল জ্যামিতিক নকশার তৈরী। সিঁড়ির কারুকাজও প্রায় একরকম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রথমে এখানে ছিল বৌদ্ধদেব বাস। এর পর আসে হিন্দু এবং সব শেষে মুসলমান। হয়তো ধর্ম প্রচারে এসে তৈরী করা হয় পীরের আস্তানা। সে যাই হোক, এখানে, ছড়িয়ে আছে তিনটি সভ্যতার নিদর্শন।
এটির নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, উঁচু ঢিবির উপর হাঁটার সময় দমদম আওয়াজ হতো। তাই এ নামকরণ করা হয়। এমন শব্দ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি।
ঢিবির পাশেই একটি পুকুর আছে। একে ঘিরে পুরোনো কিছু গল্প আছে। যেমন: হাড়ি ভেসে আসা, রাতে কেউ ডাকে, মানুষ বলি দেয়া ইত্যাদি। অদ্ভুত অদ্ভুত গল্পের মধ্যে আরো রয়েছে- পুকুরে পানির মধ্যে কিছু গাছ ছিল, সকল রোগের ঔষুধ হিসেবে ব্যাবহারযোগ্য-নাম- অচীন বৃক্ষ। এখন মাত্র ৩টি গাছ বেঁচে আছে। কিন্তু সেই গাছের আর ক্ষমতা নেই।
দীঘির পাড়ে একটি কুয়া আছে। এ নিয়েও গল্প আছে। এই এলাকার কোনো বাড়ীতে অনুষ্ঠান হলে কুয়ার কাছে এসে কুমারী মেয়েরা যদি বলতো যে ‘আমাদের বাড়ীতে অনুষ্ঠান’, তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই কুয়ার পাড়ে সোনার তালা, চামস, গামলা পাওয়া যেত। ব্যবহার শেষে এখানে সেগুলো রেখে দিলে আবার অদৃশ্য হয়ে যেতো। তাই এই দিঘির নামকারণ করা হয় কুমারীদিঘি।
এই দিঘির পাশে যে কূয়া আছে তার খুব কাছেই নাম না জানা ৭টি ফুল গাছ ছিলো। জনশ্রুতি আছে, সেই ১৮’শ বছর আগে এই গাছগুলো লাগানো হয়। কালের গহবরে তিনটি ফুলগাছ হারিয়ে গেছে, বাকী চারটি গাছ এখনো এখনো জীবিত রয়েছে।
এই দিঘির প্রধান আকর্ষণই হলো পানির মধ্যে জীবিত থাকা ফুল গাছ। এই ফুল গাছগুলো বছরের ৬ মাস মরা থাকে আবার ৬ মাস পরে জীবিত হয়ে নতুন পাতা ছেড়ে ফুল ফোঁটে। অতি সুন্দর ও সৌরভময় এমন ফুল এদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। এই ফুল গাছ কেউ তুলে বাড়িতে লাগায় না। কারণ এই ফুলগাছ অন্য কোথাও লাগালে তা মারা যায়।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.