তিনবিঘা করিডোর একটি স্বতন্ত্র ভূমি। এটি ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার ভেতর অবস্থিত। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেয়া হয়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেঘলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার একেবারে সীমান্তে অবস্থিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর সার্বভৌমত্ব ১৯৭৪ সালের ১৬ মে পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এতে করে দুই দেশেই তাদের ছিটমহলে, যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করলেও ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারণে হস্তান্তর করেনি। কারণ এটি হস্তান্তরে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসেবে দিয়েছিল, এই শর্তে যে একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
১৯৭১ সালেরর পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেয়া হয়েছিল।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে: “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে, যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।”
পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হত, এতে করে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। কারণ সেসময় সেখানে কোনো হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। একই বছরের ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০১১ সালের পূর্বে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাতে কোণো হাসপাতাল বা কলেজ কিছুই ছিল না। ২০১১ সালে তৎকালীন সরকার দহগ্রামে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করেন।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.