ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার স্থান মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হলেও এখানে ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরোনো নয়। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের সমস্ত স্থাপনাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে কুষ্টিয়া জেলার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ এখনো তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
এই মসজিদটি বাংলাদেশর অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন। কুষ্টিয়া জেলা সদরের ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত বলে গ্রামের নাম অনুসারে এই মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’।
মসজিদটি নির্মাণে ইট, পাথর, বালি ও চিনামাটি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটি পাঁচটি গম্বুজ ও প্রবেশপথের কাছে দুটি মিনার নিয়ে গঠিত। মূল মসজিদে রয়েছে তিনটি সুদর্শন গম্বুজ, তিনটি দরজা, তিনটি নামাজে দাঁড়ানোর কাতার। পুরো মসজিদের ভেতরের দেওয়ালে সুন্দর পুরাকৃর্তি। মসজিদটির রয়েছে সুন্দর বারান্দা ও বিশাল আকৃতির প্রধান গেট। এছাড়াও প্রধান গেট থেকে একটু দূরেই রয়েছে দুইটি গম্বুজ। মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুইটি চুন ও সুরকির তৈরি সুন্দর ফুলেল জানালা রয়েছে।
মসজিদটির আরো একটি বিশেষত্ব হলো, এর পুরো দেওয়ালে যে আলপনা আঁকা, তার কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। প্রতিটি আলপনা নতুন ডিজাইনে। টালি, চুন, সুরকি দিয়ে পুরু গাঁথুনি হওয়ায় মসজিদটি গরমের দিনে ঠাণ্ডা ও শীতের দিনে কিছুটা গরম থাকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঝাউদিয়া মসজিদ সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত থাকলেও এর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়নি। জনশ্রুতি আছে, ইরাকের শাহ সুফি আদারি মিয়া ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আস্তানা তৈরি করেন। সে সময় তিনিই এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। আবার স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে, মসজিদটি অলৌকিকভাবে তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা এটাও মনে করেন, মসজিদের পাশেই উক্ত সুফি সাধকের কবর রয়েছে।
বর্তমান মসজিদটির দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় তৈরি করা হয়েছিল। তবে এটি সম্পর্কেও প্রত্নতাত্ত্বিক কোনো নথি পাওয়া যায়নি। ১৯৬৯ সালে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাতে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চুক্তি অনুযায়ী এটি ঝাউদিয়া গ্রামের জনৈক হাসান আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যগণ তত্ত্বাবধান করে আসছেন। তবে বর্তমানে মসজিদটি সরাসরিই বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পরিচালনা করে থাকে।
যেভাবে যাবেন:
কুষ্টিয়া আসলে যে কেউ খুব সহজেই আসতে পারেন এ মসজিদে। দেখে যেতে পারেন মুঘল শাসনামলের এই ইসলামের নিদর্শন। কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড় থেকে সোজা বাসে অথবা সিএনজি যোগে ঝাউদিয়া বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। তারপর ঝাউদিয়া বাজারের কালিতলা মোড় থেকে ঝাউদিয়া-মাছপাড়া রোডে পাখিভ্যান অথবা অটোতে করে ১০ মিনিটে পৌঁছানো যায় ঝাউদিয়ার শাহী মসজিদ।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.