বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অন্যতম পূণ্যস্থান হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার। এটি নগরীর নন্দনকাননে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার হিসেবেও পরিচিত। ১৮৮৯ সালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি এই বিহারটি প্রতিষ্ঠা করে। এই বিহারের রয়েছে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির (তৎকালীন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতি) প্রথম সভাপতি শ্রীমৎ উ. গুনামেজু মহাথের এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিরকৃষ্ণ চৌধুরী বিহার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। প্রাথমিকভাবে ভক্ত এবং পূজারীদের আর্থিক সহযোগিতায় ভবনটির একতলা নির্মিত হয়।
১৯০৩ সালে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাস্থ রংমহল পাহাড়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য মাটি খননকালে একটি পুরাতন বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া যায়। বিহারের সে সময়ের অধ্যক্ষ অগ্ গমহা পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এর তৎপরতার কারণে মূর্তিটি বঙ্গীয় সরকার এ বিহারে প্রদান করে। বিহারের মূল ভবনটির পাশেই অপর একটি মন্দিরে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। এটি “বুড়াগোঁসাই মন্দির” নামে পরিচিত।
প্রতিষ্ঠার পর এই বিহারের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন অগ্ গমহা পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের, দ্বিতীয় অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের, তৃতীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী, চতুর্থ অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমৎ সুবোধিরত্ন মহাথের, পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতিঃপাল মহাথের এবং ষষ্ঠ অধ্যক্ষ আছেন শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির।
২০০৫ সালে বিহারে প্রবেশের দুই পাশে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এবং অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী মহাস্থবিরের স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়াও বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধের আসনের নিচে দুইপাশে পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এবং শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এর আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।
চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন দূর্লভ পাণ্ডুলিপি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার আছে। এটির নাম চিন্তামনি গ্রন্থাগার। এখানে তালপাতার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। এই সংগ্রহশালায় পালি ভাষা, বর্মী ভাষা, সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্র রয়েছে। শাস্ত্রীয় সাহিত্য এবং তালপাতায় রচিত শিল্পকর্ম গ্রন্থাগারকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে।
এছাড়াও বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ হোস্টেল, ধম্মবংশ ইন্সটিটিউট, চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.