যারা ইতিহাসের সানিধ্যে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তারা ঘুরে আসতে পারেন দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ, বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী জেলা বগুড়া থেকে। বগুড়াকে বলা হয় প্রাচীন বাংলার রাজধানী। এই পূন্ড্রবর্ধনে অর্থাৎ বর্তমানের মহাস্থানগরে ছিল মোর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের শাসকদের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর ধারে এই দূর্গনগরী। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস যেন ঘুমিয়ে আছে এখানে। তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থান ‘গোকুল মেধ’। প্রত্নস্থলটি এদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় লোকগাঁথার নায়ক-নায়িকা বেহুলা-লক্ষিণন্দরের বাসর ঘর বলে বেশি পরিচিত।
গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসর ঘর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ১৯৩৪-৩৬ সালে এন.জি মজুমদারের উদ্যোগে খননের ফলে এখানে স্তূপের নিচ থেকে একটি বিশাল মন্দির উন্মোচিত হয়। এই মন্দিরটি স্তরে স্তরে উঁচু করে কুঠুরি নির্মাণ রীতিতে নির্মিত। জায়গাটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ। এখানে ত্রিকোন বিশিষ্ট ১৭২টি কক্ষ আছে। এ কক্ষগুলো দেখতে বেশ অস্বাভাবিক। এলোমেলো বুনিয়াদ এর বোধগম্যতাকে আরো কঠিন করে তোলে। এই স্তুপটিই কিন্তু বেহুলার বাসর ঘর নয়। এর পশ্চিম অংশে আছে বাসর ঘরের স্মৃতিচিহ্ন। পূর্ব অংশে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা বিশিষ্ট একটি স্নান ঘর। ওই স্নান ঘরের মধ্যে ছিল ৮ ফুট গভীর একটি কুপ। প্রচলিত আছে, বেহুলা লক্ষ্মীন্দর বাসর যাপনের পর কুপটিতে স্নান করে শুদ্ধতা লাভ করেছিল।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতে, আনুমানিক ৭ম শতাব্দি থেকে ১২শ’ শতাব্দির মধ্যে এটি নির্মিত হয়। তবে বর্তমান গবেষকদের মতে এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এখানে বহু গর্তযুক্ত একটি ছোট প্রস্তর খন্ডের সঙ্গে ষাঁড়ের প্রতিকৃতি একটি স্বর্ণ পাত পাওয়া গিয়েছিল। এ থেকে ধারণা করা হয়, এটি একটি বর্গাকৃতির শীব মন্দির ছিলো।
বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে এটাকে বৌদ্ধ মঠ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থে এই মেধকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নির্মাণ করা হয়েছিল পৌণ্ড্রবর্ধন রাজধানীকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে খুব সহজেই সড়ক পথে বগুড়া যাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি, টেম্পো, রিকশা করে গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসরঘরে যাওয়া যায়। মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে গোকুল নামক গ্রাম এবং গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রাম তিনটির সংযোগ স্থলে এটি অবস্থিত।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.