কালা পাহাড় হচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের সর্বোচ্চ বিন্দু বা চূড়া। এমনকি এটি বাংলাদেশের উত্তর অংশেরও সর্বোচ্চ বিন্দু। কালা পাহাড়কে স্থানীয় ভাষায় ‘লংলা পাহাড়’ নামেও ডাকা হয়। ‘কালা পাহাড়’ হচ্ছে সর্বোচ্চ চূড়ার স্থানীয় নাম।
বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে, এই পাহাড়টি ‘হারারগঞ্জ পাহাড়’ নামেও পরিচিত। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থান করা এই পাহাড়ের ৬০% বাংলাদেশে পড়েছে এবং বাকি অংশ ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় অবস্থিত। ত্রিপুরায় এই পাহাড়টির বাকি অংশ রঘুনন্দন পাহাড় নামে পরিচিত।
ভারতের বিখ্যাত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ধর্মীয় স্থান, ঊনকোটি এই পাহাড়টির পাদদেশে অবস্থিত। শরৎকালে আকাশ পরিষ্কার হলে কালা পাহাড়ের সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে হাকালুকি হাওরয়ের (বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর) নীল পানি দেখা যায়। এই পাহাড় সংলগ্ন কিছু খাসিয়া স্থাপনা রয়েছে, যেমন- নুনছরা পুঞ্জি,পানাইছরা পুঞ্জি,পুটিছরা পুঞ্জি এবং বাইগঞ্ছরা পুঞ্জি। খাসিয়া ভাষায় ‘গ্রামকে’ ‘পুঞ্জি’ বলা হয়।
স্থানীয়দের মতে, একসময় প্রচুর হাতি ছিল যা বর্তমানে নেই এবং ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকায় বন্যহাতিরা এ এলাকায় এখন আর আসে না। তবে পোষ্য হাতির বিচরণ আছে এখানে। নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পেতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা হাঁটার পর পৌঁছে যাবেন কালা পাহাড়ের স্বচ্ছ চূড়ায়। পাহাড়ের চূড়া থেকে এ পথেই আবার ফিরতে পারেন। তবে পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা পেতে এবং ট্রেকিং প্রিয় হলে কালা পাহাড়ের উল্টো দিকে মুড়াইছড়া ইকোপার্ক হয়ে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা হয়ে বের হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আগেই গাইডকে বলতে হবে। কারণ সব গাইড এ রাস্তা চেনে না। যেহেতু কালা পাহাড়ের একটি অংশ ভারতে এবং পাশেই সীমান্ত, তাই ভুল পথে গেলে বড় বিপদ হতে পারে। গাইডের কথার বাইরে এক পা-ও এগোনো যাবে না এবং দলছুট হওয়া যাবে না।
কালা পাহাড় আজগরাবাদ চা বাগান থেকে এটি মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এমনকি মৌলভীবাজারের জুরী উপজেলার রাজকি চা বাগান থেকেও এটি দেখা যায়। জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বাজারের কাছে অবস্থিত রাজকি টি স্টেট থেকেও কালা পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ কর যায়।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে কালা পাহাড়ের উচ্চতা ১ হাজার ১০০ ফুট। ২০১৫ সালের নভেম্বরে একদল স্থানীয় অভিযাত্রী বিডি এক্সপ্লোরার এই চূড়াটি খুঁজে পায় এবং গারমিন চালিত জিপিএস দিয়ে সর্বোচ্চ বিন্দু ১,০৯৮ ফুট (সমুদ্র স্তর থেকে) পরিমাপ করে।
যেভাবে যাবেন:
কালা পাহাড় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার রবির বাজারের নিকটে অবস্থিত। ঢাকা থেকে সরাসরি কুলাউড়াগামী ট্রেন এবং বাস পাওয়া যায়। প্রথমে কুলাউড়া থেকে নেমে গাড়িযোগে রবিরবাজার হয়ে আজগরাবাদ চা বাগানে যেতে হবে। লোকাল অথবা রিজার্ভ গাড়িতে যেতে পারেন। এরপর বেগুনছড়া পুঞ্জির মন্ত্রীর কাছ থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে পাহাড় আরোহন করে পৌঁছে যাবেন কালা পাহাড়ের চূড়ায়।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.