ভোজন রসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় একটি খাবার শুঁটকি। শুঁটকি দিয়ে যে কত রকমের রান্না করা যায় তার ঠিক নেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম ভাবে শুঁটকি রান্না করে খাবার প্রচলন আছে। এখন দেশের গণ্ডী পেরিয়ে বিদেশের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় খাবার শুঁটকি।
বাংলাদেশে উৎপাদিত শুঁটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় পর্যটন শহর কক্সবাজারে। একসময় কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি শুঁটকির গ্রাম ছিল। কিছু দরিদ্র মানুষ শুঁটকি তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন শুঁটকি উৎপাদন হয় বাণিজ্যিকভাবে, বিশাল কলেবরে।
কক্সবাজারে শুঁটকি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মহাল নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। কক্সবাজার শহরের পশ্চিম সাগরের তীরে এই নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লী। এটি নতুন চরএলাকা। বছরজুড়ে এখানে চলে শুঁটকি মাছের উৎপাদন। বিশাল এলাকাজুড়ে শত শত বাঁশের মাচায় নানা জাতের মাছ শুকানো হয়।
বিশাল সমুদ্র উপকূলে বিশাল জায়গা নিয়ে এই রকম একটা শুঁটকিপল্লী হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি শুঁটকি তৈরির এই মহাযজ্ঞ দেখলে ভ্রমন তালিকায় যুক্ত হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
ভোর রাত থেকেই এখানে শুরু হয় কর্মতৎপরতা। গভির সমুদ্র থেকে আসতে থাকে মাছভর্তি ট্রলার। আর এই এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এই কাজের সাথে যুক্ত। এখানকার সব পরিবারের একটাই কাজ শুঁটকি উৎপাদন। পরিবারের সব সদস্যই কোন না কোন ভাবে এই কাজে সহযোগিতা করে। বিশেষ করে নারীরা শুঁটকি উৎপাদনের প্রতিটা পর্যায়ে সরাসরি কাজ করে।
এই শুঁটকি মহালের আশে পাশে ঘুরে বেরালেই দেখা যায় নারীরা কিভাবে একের পর এক শুঁটকি বেছে বেছে তা রোদে শুকানোর উপযোগী করছে। কাজের ফাকে ফাকে চলে হালকা খুনসুটি হাসি আনন্দ। এটাই তাদের জীবন। পুরো এলাকার বাতাসে ভেসে বেরায় শুঁটকির গন্ধ। শহরের মানুষের কাছে কিছুটা বিরক্তকর লাগলেও এই গন্ধই তাদের জিবনের একটি অংশ।
শুঁটকি মহালের শতশত মাচায় কত রকমের মাছ যে ঝুলে আছে তার ঠিক নেই। চেনা অচেনা নানান রকম মাছের দেখা মিলবে এখানে। এসব শুঁটকির মধ্যে সামুদ্রিক রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্কা, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, চিংড়ি এবং মিঠাপানির মাছের মধ্যে শোল, কাচকি, কুচো চিংড়ি, মলা, গইন্যা, বাইলা, ফাইস্যাসহ অনেক প্রজাতির মাছের শুঁটকি হয়।
ছোট বড় বিভিন্ন আড়তে শুঁটকি বিক্রিও হয় এখানে। বাজার দরের চাইতে কিছুটা কম দামেই শুঁটকি পাওয়া যায় এখানে। শুঁটকি বিক্রির জন্য একসময় কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে ফুটপাতে দোকান ছিল। এখন শুঁটকি বিক্রিতে এসেছে আভিজাত্য। কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেট, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী বিচ মার্কেট, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায় বড় বড় শুঁটকির দোকান। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব দোকান থেকে শুঁটকি সংগ্রহ করে।
বলা হয় কক্সবাজারে শুঁটকিকে ঘিরে প্রতি বছর কমবেশি ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। শুঁটকি এখন একটি পর্যটন পণ্য। আগে পর্যটকরা বেড়াতে আসলে বার্মিজ পণ্য, আচার এসব নিয়ে যেত কিন্তু এখন সবাই কিছুটা হলেও শুঁটকি নিয়ে যায়। পাশাপাশি প্রবাসীরাও এখন বেশ শুঁটকি পছন্দ করছে। তাই বিদেশেও এখন কক্সবাজারের শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে, রপ্তানিও হচ্ছে।
যদিও কক্সবাজার ভ্রমণে সমুদ্রবিলাসটাই সবার আসল কারণ তবুও সময় করে একটু কষ্ট হলেও ওই শুঁটকি পল্লী দেখে আসা উচিত। দেশের মধ্যে কি এক মহাযজ্ঞ হচ্ছে তা নিজ চোখে দেখলে হয়তো শুঁটকি খাওয়ার প্রতি আগ্রটা বেড়েও যেতে পারে।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.