খান জাহান আলীর সমাধি সংলগ্ন এক গম্বুজ জামে মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। জেলার ঠাকুর দিঘি’র পাড়ের খান জাহানের দরগাহ কমপ্লেক্সের বা সমাধি কমপ্লেক্সের অন্যতম একটি স্থাপনা এটি। কমপ্লেক্সের সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত এই এক গম্বুজ জামে মসজিদ।
বর্গাকার মসজিদটি তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি খিলান পথ বা দরজা রয়েছে; যা উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণের খিলান পথগুলো বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। মসজিদে মিহরাবের সংখ্যা একটি। মিহরাবের অবস্থান পূর্বদিকের খিলান পথ বরাবর এবং এটি অর্ধ-বৃত্তাকার।
মসজিদের বাইরে চারপাশে রয়েছে বক্রাকার কার্নিশ এবং চারটি গোলাকার কর্ণার টাওয়ার। বর্গাকার কক্ষের উপরিভাগের প্রায় বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে একটি গোলার্ধ আকৃতির ইটের তৈরি গম্বুজ।
এই মসজিদের গঠনশৈলী এবং নির্মাণ কৌশল লক্ষ্য করলে দেখা যায় এটি খান জাহান আলীর সমাধির অনুরূপ। সে কারণে সমাধি ও মসজিদ উভয় স্থাপনা তৈরির সময়কাল কাছাকাছি ধরা হয়। খান জাহান আলীর সমাধি থেকে যে লিপি পাওয়া গেছে সেই হিসেবে ২৫ অক্টোবর ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দ (২৭ যিলহাজ্ব ৮৬৩ হিজরিতে) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ধারণা করা হয়, এই সমাধি তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নির্মাণ করেছিলেন। সে হিসেবে এই স্থাপনার বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। অনেকেই একে দিল্লির তুগলক স্থাপত্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর কারণ চতুর্পাশে গোলাকৃতি কর্ণার টাওয়ার, খিলানের অবস্থান এবং এর সংগে সরদলের সাবলীল সমন্বয়। ফিরোজ শাহ তুগলকের আমলে বাংলা বিজয়ের সময় অনেক কারিগর এখানে বসতি স্থাপন করেন। তাছাড়া তৈমুর লং ১৩৯৯ সালে দিল্লি আক্রমণ করলে অনেকে বিতাড়িত হয়ে কিংবা দেশত্যাগ করে বাংলায় আশ্রয় নেন। ধারণা করা হয় তাদের মাধ্যমেই তুগলক স্থাপত্য এখানে পরিচিতি পায়। এই মসজিদ যার অন্যতম দৃষ্টান্ত।
যেভাবে যাবেন:
প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে হলে প্রথমে আপনাকে বাগেরহাট যেতে হবে। বাগেরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ‘খঞ্জালী দীঘি’ বা ‘খানজাহান দীঘি’র (ঠাকুর দীঘি) উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত এই এক গম্বুজ জামে মসজিদ।
Add Reviews & Rate
You must be logged in to post a comment.